কুরোসাওয়া অথবা ফুকো

অলংকরণ: বাবুল হোসাইন সোহাগ

আশেক মামুদকে খানিকটা বিচলিত দেখায় কয়েক দিন ধরে; চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর সে বেশি বিচলিত কি না, সেটা অবশ্য ভেবে দেখেনি। অবসর সময় কী করে কাটাবে, সেটা নিয়ে ভাবেনি। কখনো হয়তো ভেবেছে একটা প্রাইভেট হাসপাতালে আবার রোগী দেখা শুরু করবে, তবে ভেতর থেকে খুব সাড়া পায়নি। এমনিতে সে গড় আয়ু পার করতে পেরেছে বলে মাঝে মাঝে পুলকিত হয়, রওনকের সাথে বড় খোকার সাথে এমনকি বড় খোকার বউয়ের সাথে সে তার পুলকিত মুখের ছবি প্রকাশ করেছে কয়েকবার আর মুখে বেশ কিছু উত্তেজিত বাক্যও বলেছে। কেন সে হজে যায়নি, এ নিয়ে রওনক তাকে বেশ কয়েকবার ধমক দিয়েছে; তার সাথে পেনশনের টাকার একটা অংশ নিয়ে হজে যাওয়ার কথা, সে অনেকবার বললেও যায়নি। কেন যায়নি, তার জুতসই ব্যাখ্যা তার কাছে থাকলেও সে রওনককে বলেনি।

একটা আরাম কেদারায় চিত হয়ে শুয়ে থেকে সে দৈনিকের হেডলাইন পড়ে; কখনো সকাল নটা থেকে দশ-এগারোটা পর্যন্ত কখনো তিনটে থেকে চার-পাঁচটা পর্যন্ত দুটো-তিনটে পত্রিকার পাতা ওলটায়। ভালো লাগলে কোনো খবর বিস্তারিত পড়ে। আর ইউটিউবে পুরোনো দিনের হিন্দি গান শোনে, বিশেষত রাজকাপুর আর নার্গিসের অভিনয় করা ছবির গান। খবর পড়তে পড়তে সে আবিষ্কার করেছে যে একটা বিশেষ ধরনের খবর তার মনোযোগ আকর্ষণ করছে ইদানীং। সে জাতীয় দৈনিকের পাতা ওলটাতে গিয়ে প্রতিদিন এই জাতীয় খবর বেশি ছাপা হতে দেখে। তাহলে আগে কী এ রকম ঘটনা ঘটত না? এখন সংক্রামক রোগের মতো এটা বেড়ে গেল কেন? সে দেখে, সিলেটে একদল যুবক পালা করে এক নববধূকে ধর্ষণ করেছে। স্বামীকে বেঁধে রেখেছে গাছের সাথে। কোথায় যেন মায়ের সামনে মেয়েকে ধর্ষণ করেছে এক দলের তরুণ সদস্যরা। কোথায় এক পিতা তার ১৪ বছরের কন্যাকে ধর্ষণ করেছে। মাদ্রাসার এক অধ্যক্ষ তার ছাত্রীকে ধর্ষণ করে আটক হয়েছে। আরও আগে পড়া একই জাতীয় খবরও তার মনে পড়ে; এক নারীকে বিবস্ত্র করে ধর্ষণ করে তার ভিডিও ছড়িয়ে দিয়েছে এক যুবক। বন্ধু আলামিন থাকলে ওর সাথে আলাপ করা যেত। এই শক্তির উত্থান কেন হলো তার একটা ব্যাখ্যা সে দিত যেমন অন্য বিষয়ের দেয়। সে একদিন বলেছিল, ফুকো সাহেবের মতামত দিয়ে -যৌন অবদমন বেড়ে যাওয়া বা স্বাধীনভাবে যৌনাচার করার সুযোগ কমে যাওয়ার কারণে এসব বাড়ছে। আমরা ভিক্টোরীয় যুগের কড়া নিয়মে চলেছি। তার কথায় বোধ হয় করোনা প্রসঙ্গও ছিল। সে নারীর ওপর সহিংসতার সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করলে মামুদ তাকে থামিয়ে দিয়েছিল; তার বেশ মনে আছে। ইংরেজি দৈনিক হাতে তোলার আগে তার বাথরুম চাপে। সে লুঙ্গির খুট ধরে (লুঙ্গি শক্ত করে বাঁধতে পারে না বলে প্রায়ই তা খুলে থাকে) বাথরুমে যায়; কমোডে বসে সে যুবকদের কথা ভাবে, পাষণ্ড বাবার কথা ভাবে, মাদ্রাসার মেয়েটার জবানবন্দির কথা ভাবে, থানার ওসির কথা মনে পড়ে, যে মেয়েটাকে বহু অশ্লীল প্রশ্ন করলে মেয়েটা হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেছিল। সেই সাক্ষাৎকার পুলিশ আবার ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়েছিল। সে সব মেয়েকে দেখতে পায়, তাদের নগ্ন পুরুষ্ট শরীর দেখতে পায়, যুবকের উত্তেজিত চকচকে চোখ ও উত্থিত পৌরুষ দেখতে পায়। সে নিজের বাতিল শিশ্নের দিকে একবার তাকায়। সে আশ্চর্য হয়ে দেখে তার যন্ত্রটা কাঁপতে কাঁপতে শক্ত হয়ে যাচ্ছে, গতিমান হচ্ছে। সে মনে করে, সে-ও পুরুষ, তারও অনেক ক্ষমতা ছিল যৌবনে, আবার তা ফিরে এল নাকি! বাসায় তেমন কেউ থাকে না। সবাই কাজে বের হয়ে গেছে। রওনক হয়তো শুয়ে আছে নিচের ড্রয়িংরুমে। সে তাই বাথরুমের দরজা সাধারণত আটকায় না। নিশ্চয় বদঅভ্যাস। সে বেশ লজ্জা পায়। পুলিশের সামনে মেয়েটা তার ওপর অত্যাচারের যে বর্ণনা দিয়েছিল, তা কয়েকটা চ্যানেল সরাসরি দেখিয়েছিল। মেয়েটা সময়ের মতো সব বলেছিল, কেউ কেউ প্রস্তাব দিয়েছে মেয়েটার গরিব বাবাকে যে তুমি মেয়েটাকে ওই মাওলানার সাথে বিয়ে দিয়ে দাও। সে চার নম্বর বিবি হতে পারে। তাতে একটা সমাধান হবে। যে লোকটা তাকে জোর করে কুৎসিত ও অমানবিকভাবে তার শরীর নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছ, যার ভয়ংকর ও লাম্পট্যেভরা কামুক চোখ দেখলে তার ঘৃণায় বমি আসে, তার সাথে বিয়ের প্রস্তাব দেয় লোকজন; সম্ভবত মাওলানার পক্ষের লোক। এর চেয়ে পাপ আর কী হতে পারে? মেয়েটা কাঁদতে থাকে। গরিব বাবা চুপচাপ ছিল। মেয়ে চিৎকার করে বলেছিল, ‘আমি গলায় দড়ি দেব।’ প্রস্টেট গ্লান্ড বড় হয়ে যাওয়ার পর বা দীর্ঘ দিনের অনভ্যাসবশত সে জানে যে সব দিক দিয়ে সে অক্ষম তবু আজকের দৃশ্য তাকে ভাবিয়ে তোলে, সে যে একদা পুরুষ ছিল, এই লম্পটগুলো তাকে তাই মনে করিয়ে দিচ্ছে? সে কমোড শাওয়ার দিয়ে ব্যাটাকে ঠান্ডা করতে চায়, একসময় সে স্যারেন্ডার করে। তবে মনের ভেতরে একটা বিজয়ী পুরুষের ভাব থেকে যায়।

আরাম কেদারায় আবার একটু শরীরটা এলিয়ে দেয়। জানালা দিয়ে নিচের সবজি ও ফুলের ক্ষেত দেখা যাচ্ছে। একটা পুরুষ বিড়াল আর একটা মাদী বিড়াল অনেকক্ষণ ধরে প্রেম-প্রেম কাম-কাম অভিনয় করছে। মেয়ে বিড়ালকে পুরুষ বিড়াল তাড়া করছে, তবে সে বেশি দূর যাচ্ছে না, পুরুষ বিড়ালটা মেয়ে বিড়ালটার চারপাশে লেজ উঁচিয়ে, গোঁফ কাঁপিয়ে পাক খায়, মুখে গরগর করে শব্দ করছে, কাছাকাছি হচ্ছে, জাপ্টাজাপ্টি করছে, নখরামি করছে। আবার পালিয়ে যাচ্ছে। বেশ অনেকক্ষণ চলে পর্বটা। মামুদ দেখে একসময় পুরুষ বিড়ালটা মেয়ে বিড়ালকে ভালো করে পাকড়াও করে তার পিঠে উঠে বসে। সে তার কাজ শেষ করে। মেয়ে বিড়ালটা আড়চোখে পুরুষ বিড়ালটার দিকে তাকিয়ে হাঁটা শুরু করে। মামুদ কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। পুরুষ বিড়াল আর যুবক ধর্ষকদের মধ্যে একটা তুলনা করে। বিড়ালের প্রতি কোনো রাগ না হলেও যুবকদের প্রতি রাগ-ঘৃণা থেকেই যায়। কেন? প্রাকৃতিক নিয়ম তো একরমই ছিল, সভ্যতার সাথে আমরা অসভ্যতাকে চিহ্নিত করতে শিখেছি, তাই? তাহলে শোভন সুন্দর জীবনের লক্ষ্য কী?

প্রিয় চিত্রপরিচালক আকিরা কুরোসাওয়ার একটা ছবি সে বহুদিন থেকে খুঁজছে। শর্ট ফিল্ম। আকিরার পরিচিত ছবি প্রায় সব তার দেখা। তবে ওই ছবিটার কথা সে ভুলতে পারে না। অনেক আগে দেখেছিল। একটা শান্ত সুন্দর গ্রাম, ফুল আর নদীতে পরিপূর্ণ। সেই নদীতে আজ কাঠের তৈরি জলের কল, সেগুলো পাক খায়। এক বুড়ো বসে বসে মিলের চাকা বানাচ্ছে। ১১০ বছর তার বয়স। যে যুবকটা গ্রামটা দেখতে গিয়েছে সে অবাক হয় এই গ্রামের লোকজনের কাজ দেখে। এক অজানা বীরের সমাধি চিহ্নিত স্থানে সবাই ফুল দেয়। যুবকও দেয়। আশেক মামুদের ওই যুবকের মতো ওই গ্রামে যেতে ইচ্ছে করে। ছবির মতো গ্রাম। আর বুড়োকে যখন যুবক নানা কথা জিজ্ঞেস করে সে খুব সুন্দর করে কথা বলে। জীবনের তাৎপর্যের কথা বলে। সে বলে, জীবন সুন্দর, বেঁচে থাকাটাই সুন্দর, সহজ সুন্দরভাবে বেঁচে থাকাটা সুন্দর। সাদা দাড়িতে লাল রঙের একটা ছোপ দেওয়া। ছোটখাটো মানুষ। বিড়াল বিড়াল চেহারা আর মুখে মৃদু চাপা হাসি। একদল লোক ও শিশু ব্যান্ডপার্টির মতো নাচতে নাচতে গ্রামের পথে হাঁটতে থাকলে বুড়ো তার কর্নেট নিয়ে নাচতে নাচতে তাদের সাথে বেরিয়ে যায়, যুবক সে দিকে তাকিয়ে থাকে। জীবন আসলে সুন্দর, খুব সুন্দর।

ছবিটা সে আবার দেখতে চায়, জানে না খুঁজে পাবে কি না। বড় খোকাকে বলতে হবে। বড় খোকা ভালো ছবির খবর রাখে। তার সংগ্রহে অনেক ছবি আছে। এটা আছে কি না, সে জানে না। সে লুঙ্গিটা ভালো করে গিঁট দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। একটা বই খুঁজতে চায়। কুরোসাওয়ার আত্মজীবনী, তিনি অর্ধেকটা লিখেছিলেন। বাকিটা লিখতে চাননি। বাকিটাতে তার মতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেই। তবে আশেক মাহমুদের মনে হয় তিনি লিখলে ভালো করতেন। জীবনবাদী এই শিল্পীও একবার আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। সেটা হয়তো অপূর্ণতা থেকে। তার ঠিক মনে নেই। সে বইটা খুঁজতে গিয়ে বইয়ের তাকে হাতে দিতেই দেখে বাল্যবন্ধু লোকমান ঘরের মধ্যে ঢুকল। সে কীভাবে ঢুকল সে কথা ভাবতে গিয়ে পরক্ষণে ভুলে গেল। তাকে বেশ উস্কোখুস্কো দেখাচ্ছে। তারও চাকরি শেষ, অখণ্ড অবসর, বসে বসে পদ্য লেখে, আর পত্রিকায় পাঠায়। বেশির ভাগই ছাপা হয় না। নতুন করে কোনো বুড়ো কবিকে কেউ গুরুত্ব দিতে চায় না। লেখার বাতিক আগেও ছিল, তবে তার কথায়, তখন সময় ছিল না। এখন সময় আছে তবে প্রতিভা পালিয়ে গেছে বলে মামুদের ধারণা। সে অবশ্য এ নিয়ে ভাবে না। লোকমান কোনো কথা না বলে তাকে হাত ধরে টেনে নিচে নামায়। বাড়ির বাইরে এসে বলে, ‘লুঙ্গি পরে যাওয়া বোধ হয় ঠিক হবে না। হাজার হোক তুমি বড় একজন ডাক্তার। একটা প্যান্ট পইরা আসো।’ সে প্যান্ট পরতে গেলে পড়ে রওনকের কবলে। সে তাকে বারবার বলতে থাকে, ‘এই ভর সন্ধেবেলা কোথায় যাতিছ, বিপদ হবি কলাম।’

বউয়ের কথায় ভ্রুক্ষেপ না করে সে বেরিয়ে যায় হন হন করে। বেরিয়ে যায় লোকমানের পেছন পেছন। রাস্তায় উঠে লোকমান পূর্ব দিকে হাঁটতে থাকে। বেশ কিছু দূর গিয়ে প্রধান সড়কের উত্তরে আরও একটা ছোট মাটির রাস্তার বাম পাশে গাছপালার ভেতরে ঢুকে পড়ে লোকমান। সে থামলে মামুদও থামে। ঘাসের ওপর নির্জন এই জায়গাটাতে এক তরুণী চিত হয়ে পড়ে আছে। শীতকালের বিকেল মানে সন্ধে, আলো নেই। গাছপালাতে কিছু পাখি ডাকতে শুরু করেছে তাদের স্বভাবমতো। ওপারে মাঠের দিকে একটু পরে হয়তো শিয়ালও ডাকতে শুরু করবে। সে দেখে মেয়েটার শরীর থেকে বিশেষত বুকের কাছে ঢেউয়ের মতো মৃদু কাঁপন দেখা যাচ্ছে, জামাকাপড় বিধ্বস্ত, বুকের কাছে জামা টেনে ছিঁড়ে ফেলায় জামার ভেতরের অন্তর্বাস দেখা যাচ্ছে। ঘাসের ওপর ধস্তাধস্তির কারণে ঈষৎ আকাশি রঙের হলুদ ছোপ দেওয়া সালোয়ার কামিজে গাঢ় সবুজের লম্বা দাগ। সালোয়ার খানিকটা নামানো। কামিজের আড়ালে সেটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। তবে এক পাশে কামিজের নিচের ঝুল উঠে যাওয়াতে কোমরের সাদা ত্বকের খানিকটা দেখা যাচ্ছে। পা দুটোয় কোনো জুতা নেই। পায়ের পাতা মনে হচ্ছে রক্তহীন, পাংশুটে, খানিকটা দুমড়েমুচড়ে গেছে। বাম পায়ের গোড়ালি দিয়ে চিকন রক্তের দাগ, রক্তের সাথে পুরুষের সিমেন মিশে গিয়ে ঘোলাটে বর্ণ তৈরি হয়েছে। লম্বা চুলের ভেতর দিয়ে বৈশাখ মাসের ঝড় বয়ে গেছে মনে হয়, মেয়েটার মুখ দেখে তাকে খুব সুশ্রী মনে হয় না, তবে সে যৌবনবতী। মেয়েটা এবার জোরে একবার কাঁপুনি দিয়ে ওঠে। তাকে লোকমান এখানে কেন নিয়ে এসেছে, সে বা কি করে এই ঘটনার সাক্ষী হলো সে বুঝতে পারে না, তবে বুঝতে পারে মেয়েটা রয়েছে মরে যাওয়ার অবস্থায়; তাকে বাঁচাতে হলে এক্ষুনি হাসপাতালে নিতে হবে। লোকমান বলে, তুমি এখানে একটু দাঁড়াও, আমি একটা গাড়ি পাই কি না, দেখি। মামুদ কিছু বলার আগেই সে হাঁটা শুরু করে। সে মেয়েটার দিকে তাকায়, চেহারা বা বয়স ঠিকমতো বোঝা যায় না, তবে তার নিজের মেয়ে আয়েশার মতো মনে হচ্ছে। আয়েশা এখন ঢাকায় থাকে, তাকে বিয়ে দিতে হবে। ছোটখাটো একটা চাকরি সে পেয়েছে। সে এখানে কেন আসবে। সে দেখে আরও লোকজন চলে আসছে। মাছি যেমন আসে তেমন। সবাই এসে তাকে নানা কথা জিজ্ঞেস করে, সে কিছু জানে না, সে কিছু বলে না। সত্যি সত্যি কিছু মাছি মেয়েটার জামাকাপড়ে, মুখে, হাতে এসে বসে। মৃত মানুষের গায়ে মাছি বসে। মেয়েটা কি মারা গেছে? সে ভাবে, মেয়েটার পাল্‌স রেটটা দেখা দরকার। সে যে ডাক্তার, সেটা মনে পড়ে। নিচু হয়ে বসে ডান হাতটা তুলে নিয়ে পাল্‌স দেখে। পাল্‌স ঠিক আছে। একজন লোক তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। তার তাকানো দেখে আরও কজন। তাদের ধারণা, মেয়েটার এই পরিস্থিতির জন্য সে দায়ী। লোকমান ফেরে না। আসে একটা পুলিশের গাড়ি। চার-পাঁচজন পুলিশ এসে তাকে জিজ্ঞেস করলে সে অপারগতা প্রকাশ করে। তারাও তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। একজন বলে, ‘চলুন, থানায় চলুন। যা দেখেছেন বলবেন। আর কেউ সন্দেহের বাইরে নয়।’

তারা হয়তো মেয়েটাকে থানায় নেবে, তাকেও নেবে। আলামিন এলে ভালো হতো, সে ভালো করে বলতে পারত। পুলিশ, লোকজন কিংবা জিজ্ঞাসাবাদ বিষয়ে মামুদ খুব মনোযোগ দিতে পারে না। সে লোকমানেরও অপেক্ষা করে বলে মনে হয় না। সে দেখে বিশাল উঁচু ভূমিতে লম্বা লম্বা ঘাসের ওপর ঈষৎ সবুজ রঙের জামা পরে একটা মেয়ে চিত হয়ে শুয়ে আছে। যুবকেরা মেয়েটার সৌন্দর্য লুট করেছে বীভৎসভাবে। মেয়েটা কোনো কথা বলছে না, সে প্রতিবাদ করছে না। তবে অজস্র পাখি তার পক্ষে চিৎকার করছে। বাতাসে তার কান্না ভেসে যাচ্ছে। একপাশে দাঁড়িয়ে আছে মিশেল ফুকো, সে বলছে, ‘প্রাকৃতিক নিয়ম আপনারা মানুন। মানুষ মূলত পশু, পশুর মতো তার স্বভাব হবে, এটাই স্বাভাবিক। তাকে সভ্যতার নিয়ম দিয়ে আটকে রাখা ঠিক হবে না। তার প্রবৃত্তিকে আপনারা খাঁচায় পুরতে পারেন না। তাকে স্বাভাবিক প্রবণতা নিয়ে বাঁচতে দিন।’ কুরোসাওয়াকে দেখা গেল। সে বলল, ‘মেয়েটাকে সুস্থ করে তোলো, ওকে সুন্দর পোশাক পরিয়ে প্রেমিকার কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। ওর কানের কাছে কেউ রবীন্দ্রনাথের গান শোনাও, সুস্থ হলে ওকে সত্যজিতের ছবি দেখাবে। আমাকে বলো, আমি ওর সাথে কথা বলব। জীবন খুব সুন্দর, সুন্দরভাবে বেঁচে থাকা সবচেয়ে জরুরি।’

মামুদের সংবিৎ ফেরে না। হয়তো লোকমান এসে তাকে ও মেয়েটাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাবে।