কালীতলার ভূত

প্রতীকী ছবি কালীতলার ভূত
সংগৃহীত

আলো–আঁধারি রাত। চাঁদটা মেঘে ঢেকে যাচ্ছে মাঝে মাঝে। গ্রামের সরু পথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে তন্ময়। তন্ময়ের বন্ধু রিফাতের বড় ভাইয়ের বিয়ের দাওয়াত খেয়ে সে বাড়ি ফিরছে।

রাত অনেকটা গভীর। ঠাকুরবাড়ির পাশ দিয়ে মোল্যাদের বাঁশবাগানের মধ্য দিয়ে এঁকেবেঁকে চলে গেছে একটি রাস্তা। তন্ময় হেঁটে চলেছে। বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দূরে বন্ধুর বাড়ি। তন্ময় এমনিতেই সাহসী। তবু্ও বারবার আল্লাহর নাম মনে মনে আউড়ে যাচ্ছে, যেন কোনো ভূতপ্রেত তার কাছে আসতে না পারে।

কিছুক্ষণ এভাবেই হেঁটে চলল তন্ময়। পায়ের তলায় পড়া শুকনো পাতার মর্মর শব্দ তার বুকের মধ্যে ঝাঁকুনি দিয়ে উঠছে। কেন এমন হচ্ছে তন্ময় বুঝে উঠছে না। তবুও সে হেঁটে চলে। মোল্যাবাড়ির বাঁশবাগানের কাছে এলেই কী যেন ডানা ঝাপটে উড়ে যায়। তন্ময় হুট করে দাঁড়িয়ে পড়ে খানিকক্ষণ। মনে মনে বেশ ভয় পায়। পরে বাদুড় বুঝতে পেরে মন থেকে ভয় দূর করে দেয়।

তন্ময় আবার হাঁটতে শুরু করে। জঙ্গলের ভেতর থেকে বিড়ালের ম্যাও ম্যাও শুনতে পায়। তন্ময় দাদা–দাদির কাছে শুনেছে ভূতেরা বিড়াল সেজে আসে কখনো কখনো। তন্ময় ভাবে ভূত না তো! কোনো দিকে না তাকিয়ে সামনের দিকে হাঁটতে থাকে সে। বিড়ালও পেছন পেছন ম্যাও ম্যাও করে হাঁটতে থাকে। তন্ময় এবার অনেকটা ভয় পেতে শুরু করে। মনে মনে দোয়া–দরুদ পড়া কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়। বিড়াল তখনো পিছু ছাড়েনি। এখন ফাঁকা মধ্যমাঠ। জ্যোৎস্নার আলো অনেকটা বেড়েছে। বিড়াল কাছে এসে পা জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করছে। কালো বিড়াল। মধ্যরাতের কালো বিড়াল নাকি সত্যিই ভূত হয়। এবার তন্ময় চোখ বুজে হাঁটতে লাগল। পরক্ষণেই মনে পড়ল, তন্ময়ের মা বলেছিলেন, আল্লাহর নামে দোয়া পড়ে বাঁ পা দিয়ে বিড়ালকে লাথি মারলে বিড়াল আর থাকে না।

দোয়া ঠিকই পড়ছে। কিন্তু লাথি মারার মতো সাহস হয়ে উঠছে না। তবু সাহস করে লাথি দিল। কিন্তু লাথি লাগল না। তবে বিড়াল আর দেখা গেল না। পেছনে পেছনে ম্যাও ম্যাও শব্দও শোনা গেল না। তন্ময় ভাবল, মায়ের কথা কাজে লেগেছে। মনে হয় ভূতই ছিল। ভয়ে পালিয়েছে।

আবার নীরবে হেঁটে চলল তন্ময়। মধ্যমাঠ পেরিয়ে কালীতলা। বিশাল বটগাছ। কত বছরের বটগাছ তা কেউ বলতে পারেন না। এমনকি কারও ঠাকুরদাদাও জানেন না বটগাছটির বয়স কত। প্রায় এক একর জমিজুড়ে বটগাছটি। এরই মাঝখানে কালীমন্দির। অনেকে বলে জীবন্ত কালী। কারও কারও নাকি চোখে পড়েছে। কথিত আছে এই পথে রাতবিরাতে অনেকেই ভয় পেয়েছে। তন্ময়ও তাই দ্রুত হেঁটে চলছে।

তন্ময় রাস্তার এপাশ–ওপাশ কোনো দিকেই তাকাচ্ছে না। রাস্তার দিকে চেয়ে পথ চলছে। হঠাৎ ওপরের দিকে তাকাতেই দেখতে পায় প্রকাণ্ড এক কালী লাল রঙের বিরাট লম্বা জিব বের করে আছে। বুকে ও মুখে দুই জোড়া চোখ, ভয়ানক চোখ। রাস্তার দুই পাশে দুই পা ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তন্ময় মা বলে জোরে চিৎকার দিয়ে রাস্তায় উপুড় হয়ে শুয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

জ্ঞান ফিরে তন্ময় নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করে। ভোরে তাকে কালীতলায় অজ্ঞান অবস্থায় পেয়ে পরিচিত কয়েকজন এখানে নিয়ে এসেছে। সবার উৎসুক জিজ্ঞাসা—কী ঘটেছিল তার সঙ্গে। তন্ময়ের শুধু মনে পড়ে বুকে মুখে দুই জোড়া চোখ, ভয়ানক চোখ। রাস্তার দুই পাশে দুই পা ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে।