দেশের জন্য তিনি নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। জেল-জুলুম, নিগ্রহ-নিপীড়ন তাঁকে তাড়া করে ফিরেছে আজীবন। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের প্রাণপুরুষ সেই মানুষটির আত্মজৈবনিক গ্রন্থ অসমাপ্ত আত্মজীবনী। ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে বন্দী অবস্থায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই অমূল্য গ্রন্থটি লেখা শুরু করেছিলেন।
শৈশব থেকে তরুণ মুজিবের রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠার ক্রমবিবর্তন উঠে এসেছে এই গ্রন্থে। গ্রন্থের সূচনাপর্বে আত্মজীবনী লেখার প্রসঙ্গে তাঁর অনুভবকে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন এভাবে, ‘লিখতে যে পারি না; আর এমন কী করেছি যা লেখা যায়!...শুধু এটুকু বলতে পারি, নীতি ও আদর্শের জন্য সামান্য একটু ত্যাগ স্বীকার করতে চেষ্টা করেছি।’
বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য তাঁর জীবনের শুরুর দিনগুলোর ত্যাগ ও সংগ্রাম এই বইটিতে অসাধারণভাবে উন্মোচিত হয়েছে। দেশ এবং দেশের মানুষের প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা যথার্থভাবে ফুটে উঠেছে এখানে। দেশভাগের আগে মুসলিম লীগের একজন একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে তিনি পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির জন্য কাজ করে গেছেন। কিন্তু পাকিস্তানের জন্মের পরপরই তিনি অনুভব করেছেন, ‘এ স্বাধীনতা প্রকৃত স্বাধীনতা নয়।’ নব্য সৃষ্ট পাকিস্তান রাষ্ট্রের শাসকদের বৈষম্যমূলক এবং সাম্প্রদায়িক মনোভাব তাঁকে সব সময় পীড়িত করেছে। সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তিনি কখনো নীতির সঙ্গে আপস করেননি।
অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের অনেক প্রয়োজনীয় ও অজ্ঞাতপূর্ব উপাদান আছে। তাঁর সময়ে রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব নেতা এবং প্রবীণদের সম্পর্কে তাঁর সুচিন্তিত মতামত বইটিকে ‘ঐতিহাসিক মূল্য’ প্রদান করেছে।
বইটি পড়ার পর অবশ্য একটা অতৃপ্তি রয়ে যায়, কারণ এটি ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’। বহু ত্যাগ স্বীকার করে একজন তরুণের রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠার গল্পটি আমাদের সামনে উন্মোচিত হলেও, তিনি ভবিষ্যতে কীভাবে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্মের কারিগর হয়ে উঠলেন, তা তাঁর আপন ভাষায় জানার আকাঙ্ক্ষা আমাদের মাঝে কাজ করে।
বর্তমান সময়ের সুবিধাবাদী এবং তোষামোদিপ্রবণ রাজনীতির যে ধারা, তার বিপরীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একজন স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব। সারা জীবন নীতি এবং ন্যায়ের পক্ষে তিনি যে অটল শ্রদ্ধা বজায় রেখেছেন, তা সব মানুষের জন্য অনুসরণীয়৷ শেখ মুজিবুর রহমানের মানবিক দলিল অসমাপ্ত আত্মজীবনী তাই আমাদের সবার চলার পথের পাথেয়।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়