একটি মাস্ক

প্রতীকী ছবি
উইকিপিডিয়া

ইমু রোজকারের মতো স্কেচবোর্ডটা হাতে নিয়ে ব্যালকনিতে বসে আছে আজ। কী আঁকলে ভালো হয় তা নিয়ে তার ভাবনা। লকডাউনে গৃহবন্দী অবস্থায় মনের জোরে নিজেকে ব্যস্ত রাখার প্রচেষ্টা মাত্র। বেশ কয়েক দিন হলো তাদের এলাকা লকডাউন দেওয়ার। এদিকে পাশের বাসায় দুজন করোনা পজিটিভ। ইমু, শুভ, মিনহাজ ও প্রলয় একে ওপরের খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু। করোনাকালের এই দিনগুলোতে তারা সবাই কিছু না কিছু শেখার চেষ্টা করছে। মাসখানেকের মধ্যে প্রলয় বেশ চমৎকার কবিতা আবৃত্তি করতে শিখে নিয়েছে। এদিকে মিনহাজ তার কলম আর গুচ্ছসাদা কাগজে প্রতিনিয়তই কিছু তুলে ধরার চেষ্টায় নিমগ্ন থাকে।

ফেসবুকের টাইমলাইনজুড়েই এখন তার লেখালেখি। দীর্ঘ ছয় মাসের অন্তরালে তারা শুধু সামাজিক মাধ্যমে কথা বলে যাচ্ছে। কিন্তু আধুনিকায়নের মধ্য দিয়ে সেই পুরোনো দিনের আমেজটা তারা প্রচণ্ডভাবে মিস করে। ক্যাম্পাসের সবুজ ঘাসের চাদরে বসে আড্ডাটাকি আর যন্ত্র দিয়ে সম্ভব?

মাঝে মাঝে একে অপরের সাথে দেখা করার জন্য তাদের মন কেমন যেন বিচলিত হয়ে ওঠে। পুরোনো দিনের পুজামণ্ডপে ঘোরার গ্যালারিগুলো তারা প্রায়ই শেয়ার করে আর চ্যাটিংজুড়ে তাদের স্মৃতিমাখা গল্পসমাহার যেন শেষ হওয়ারই নাম নেই। বন্ধুবৃত্তের মধ্যে শুভ আবার সামাজিক কাজই করে যাচ্ছে। যেমন লকডাউনে মানুষের একটু প্রয়োজনের খেয়াল রাখা, সবাইকে সতর্ক ও সচেতন করা এই আর কি। তবে হ্যাঁ সেটা সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই।

এই কদিন আগে বন্যার্ত মানুষের কথা শুনে ত্রাণ নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের সাহায্য করার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে সে।

মূলত সে বন্ধুবৃত্তের আদর্শ বন্ধু বটে। করোনাকালে দুস্থ মানুষের সাহায্য-সহযোগিতা করতেই তার দিন কেটে যায়। শুভর কাজ দেখে অনেক দিন আগেই তার বন্ধুরা অনুপ্রাণিত হয়েছে। এখন তারা পাঠচক্রসহ বিভিন্ন অনলাইন কর্মশালায় অংশগ্রহণ করে। একদিন কনফারেন্সের মাধ্যমে তারা সিদ্ধান্ত নিল সরাসরি সাক্ষাৎ করার।

গল্পের মোড়টা যেন এখানেই ঘুরে গেল। সাক্ষাতের ঠিক আগের রাতে মিনহাজের মুঠোফোনে কল আসে। ওপাশ থেকে ক্রন্দনরত কণ্ঠ ভেসে ওঠে ‘বন্ধু! বাবা আর নেই।’ পুরো কথা শোনার পর বুঝা গেল প্রলয়ের বাবা প্রায় মাস্ক ছাড়াই বাজারে সবজি বিক্রি করতে যেতেন। প্রয়োজন হলে বাইরে থেকে খোলা মাস্ক কিনতেন। হঠাৎ শ্বাসকষ্টে তিনি হাসপাতালেই মারা যান। রিপোর্টে তথ্য ছিল তিনি করোনা পজিটিভ ছিলেন।

ঘটনা জানার পর সবকিছু যেন অচিরেই ঝাপসা হয়ে যায় তাদের। ইমুদের দেখা করার পরিকল্পনাটা যেন গল্পের মতোই রয়ে গেল। প্রলয় ও তার বন্ধুরা সেদিন একটি বিষয় ভালো করে অনুধাবন করল—

‘একটি মাস্ক ও সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধিই পারে জনজীবন টিকিয়ে রাখতে।’

সাংগঠনিক সম্পাদক,দিনাজপুর বন্ধুসভা