একজন আদর্শ শিক্ষক–অভিভাবক হারালাম

প্রয়াত কাজী মসিউর রহমান
ছবি: সংগৃহীত

গোপালগঞ্জ বন্ধুসভায় তখন কাজী মসিউর রহমান নিয়মিত আসতেন। একদিন এক পাঠচক্রে তিনি বললেন, ‘তোমাদের বই পড়াটা ঠিক মতো হচ্ছে না।’ তারপর বই পড়া নিয়ে তিনি যে কথাগুলো বলেছিলেন, আমরা বন্ধুরা অবাক বিস্ময়ে মুগ্ধ হয়ে শুনেছিলাম। বই নিয়ে কেউ এত সুন্দরভাবে বলতে পারেন, তা আমাদের অনেকেই ভাবতে পারেননি। সেদিনই তিনি আমাদের পাঠচক্রের জন্য বই তালিকা করে দিলেন। তিনি পাঠাগার গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। নামও ঠিক হয়েছিল ‘চেরাগ জন–অধ্যয়ন কেন্দ্র’, চলছিল বই সংগ্রহ।

কাজী মসিউর রহমান গোপালগঞ্জে অবস্থিত  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে অধ্যাপনা করতেন। সমসাময়িক সময়ে তাঁর মতো প্রজ্ঞাবান দৃঢ় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন অভিভাবক আমাদের দ্বিতীয় কেউ ছিলেন না। তাই তো বন্ধুরা স্বপ্ন দেখত ‘একজন মসিউর রহমান’ হওয়ার।

আমরা গোপালগঞ্জ বন্ধুসভার বন্ধুরা যখনই কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতাম, তখন যে কজন মানুষের কাছে আমরা নিঃসংকোচে যেতে পারতাম মসিউর স্যার ছিলেন তাঁদের মধে৵ একজন। তিনি গোপালগঞ্জ বন্ধুসভার বাতিঘর ছিলেন। একজন আর্দশ শিক্ষক ছিলেন।

আমাদের সমাজসেবামূলক কর্মসূচিগুলোতে তিনি উপস্থিত থাকার চেষ্টা করতেন। আমরা যখন কোনো দরিদ্র মানুষকে সাহায্য করতাম, তাঁর চোখে মুখে আনন্দ দেখতে পেতাম। তিনি বলতেন, ‘মানবিকতা ছাড়া শিক্ষা হয় না।’

মসিউর স্যারের সঙ্গে একবার হাজী মুহম্মদ মুহসীনের বাড়ি যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। দিনব্যাপী সেই সফরে স্যারের অমায়িক ব্যবহারে আমরা মুগ্ধ হয়েছিলাম।

কাজী মসিউর রহমান কৃষিনির্ভর সমাজের স্বপ্ন দেখতেন। বৃক্ষ ভালোবাসতেন। বন্ধুদের উৎসাহিত করতেন বৃক্ষরোপণ করতে। আমরা জীববৈচিত্র্যময় চান্দার বিলে গিয়েছিলাম একবার। অপরূপ সৌন্দর্য কীভাবে উপলব্ধি ও উপভোগ করা যায়, সেদিন তিনি তা আমাদের শিখিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘স্থানভেদে উন্নয়ন হওয়া উচিত, গ্রাম গ্রামের মতো উন্নয়ন হোক, শহর শহরের মতো।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বন্ধুসভায় যোগদানে উৎসাহিত করতেন স্যার। গোপালগঞ্জ বন্ধুসভার সাবেক সভাপতি ইনজারুল হকসহ অসংখ্য শিক্ষার্থী স্যারের মাধ্যমেই বন্ধুসভায় যুক্ত হয়েছিল।

আজ যখন মসিউর রহমান স্যারকে নিয়ে লিখছি, তখন আর তিনি পৃথিবীতে বেঁচে নেই। সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। আমরা গোপালগঞ্জ বন্ধুসভা আমাদের বটবৃক্ষ হারালাম। যে বৃক্ষতলে গেলে নিজেকে চেনা যেত। পরিশুদ্ধি হতো বিশ্বাস ও চেতনার।

সাবেক সাধারণ সম্পাদক, গোপালগঞ্জ বন্ধুসভা।