ঈদের দাওয়াত কার্ড


চৈত্র মাস চলছে। ঘরের যাবতীয় জিনিসপত্র পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন করার কাজ চলছে। দেয়াল পরিষ্কার করা, মাকড়সার জাল পরিষ্কার করা, সানশেড থেকে বাসনপত্র নামিয়ে ধোয়া, আলমারির সবকিছু বের করে পরিষ্কার করা ইত্যাদি কাজ প্রতি চৈত্র মাসেই করতে হয়। নতুন বছরকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য এই আয়োজন। আমাদের পুরোনো ঘরের আলমারি খুলে আমার একটা ডায়েরি পেলাম। ডায়েরিটা অনেক আগের, প্রাইমারি স্কুল লাইফের। অল্প অল্প অনেক কিছু লেখা আছে ডায়েরিতে। সম্ভবত কোনো একটা প্রতিযোগিতায় এই ডায়েরিটা আমি পুরস্কার পেয়েছিলাম।

ডায়েরিটা ঘাঁটতেই একটা কার্ড দেখতে পেলাম। খুব ছোট আকারের কার্ড। ওপরে ইংরেজিতে লেখা EID MUBARAK। কার্ডটা খুললাম, পড়ে দেখলাম। আমার ছোটবেলায় বন্ধু মিলন এই কার্ডটি দিয়ে ঈদের দাওয়াত দিয়েছিল। সেই দিনটার কথা মনে পড়ে গেল। সময়টা ২০০২, আমি তখন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ি। ক্লাসে আমি, মিলন আর তনয় সব সময় এক বেঞ্চে বসতাম। আমাদের তিনজনের ভালো বন্ধুত্ব ছিল।
তখন রমজান মাস চলছে, স্কুল ছুটি দিয়েছে। একদিন সকালে বাড়ির পাশের মাঠে আমি, তনয় আর কয়েকজন মিলে ব্যাডমিন্টন খেলছিলাম। হঠাৎ মিলন এল। তাকেও আমাদের সঙ্গে খেলতে বললাম। সে বলল, খেলা পরে হবে, আগে তোদের ঈদের দাওয়াত দিয়ে নিই। এ কথা বলে সে তার শার্টের পকেট থেকে দুটি কার্ড বের করে আমাকে আর তনয়কে দিল। আর মুখে বলল, তোদের দুজনকে ঈদের দাওয়াত দিলাম। ঈদের দিন আমাদের বাড়িতে চলে আসবি। একসঙ্গে সেমাই খাব সবাই মিলে। কার্ডের ভেতরে সে নিজের হাতে কলম দিয়ে লিখেও দাওয়াতের কথা বলেছে।

সেদিন কার্ডটা পেয়ে খুব খুশি হয়েছিলাম। খুব যত্ন করে ডায়েরিতে রেখে দিয়েছিলাম। তাই হয়তো আজ পেলাম। ঈদের দিন মিলনদের বাড়িতে আমরা গিয়েছিলাম দাওয়াত রক্ষা করতে। বিভিন্ন প্রকার পিঠা, সেমাই ও খিচুড়ি খেয়েছিলাম। সেদিন আমাদের যাওয়ায় দেরি হওয়াতে মিলন ঈদের নামাজ শেষে আমাদের বাড়িতে খুঁজতে এসেছিল। আমরা তার বাড়িতে গিয়ে শুনি সে আমাদের আনতে গিয়েছে।
এই সময়ে এসে ভাবতেই অবাক লাগে আমরা কত ভালো বন্ধু ছিলাম। একটা ঈদের কার্ড পেয়ে কত আনন্দ পেয়েছিলাম সে সময়। এখন ঈদের দাওয়াত দেওয়ার কার্ডের প্রচলনও নেই, সেই আবেগ, ভালোবাসাও নেই। বন্ধু মিলন এখন জীবিকার তাগিদে কাতার থাকে। ফোনে কথা হয় দীর্ঘদিন পরপর। ঈদে দাওয়াত করে, কিন্তু সেই ঈদের দাওয়াত কার্ড আর পাই না। ওটা খুব মিস করি। হারিয়ে যাওয়া ঈদের দাওয়াত কার্ড দেওয়া হয়তো আর প্রচলিত হবে না। কিন্তু স্মৃতিটা মনে থাকবে আজীবন।