ইউএসএআইডির বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন
ইউএসএআইডির উজ্জীবন প্রকল্প আয়োজিত ‘বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে। ‘বাল্যবিবাহ রুখব সম্ভাবনার আগামী গড়ব’ প্রতিপাদ্যে ২৯ জুলাই বৃহস্পতিবার মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম ভার্চ্যুয়াল ওয়েবিনারের মাধ্যমে ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করেন। এই ক্যাম্পেইন পরিবারগুলোকে বাল্যবিবাহে নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি প্রতিটি কন্যাশিশুর সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের জন্য পারিবারিক সহযোগিতা নিশ্চিত করতে কাজ করবে।
ওয়েবিনারে বলা হয়, বিগত বছরগুলোতে বাল্যবিবাহ রোধে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৭ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ১৬ বছর বয়সের আগে বিবাহিত মেয়েদের অনুপাত ৪৬ শতাংশ থেকে কমে ৩২ শতাংশে নেমে এসেছে। ১৮ বছর বয়সের আগে যারা বিয়ে করেছিল, তাদের অনুপাত ৬৬ শতাংশ থেকে কমে ৫৯ শতাংশে নেমে এসেছে। বর্তমানে করোনা অতিমারিতে বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের সংখ্যা বেড়েছে। এর কারণ হিসেবে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর আয় কমে যাওয়া, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকাসহ একাধিক বিষয় রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করতে কিশোর-কিশোরী, মা-বাবা, সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি, নীতিনির্ধারক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের ১০ লাখ গণস্বাক্ষর গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে বাল্যবিবাহ দূরীকরণে বদ্ধপরিকর। সরকার, উন্নয়ন সহযোগী বেসরকারি সংস্থা, বেসরকারি খাত এবং সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডারদের সবাইকে এটি বাস্তবায়নের জন্য একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তিনি করোনা অতিমারির এ সময়ে দেশে বৃদ্ধি পাওয়া বাল্যবিবাহের সংখ্যা হ্রাস করতে সময়োপযোগী এই ক্যাম্পেইন শুরু করার জন্য ইউএসএআইডির উজ্জীবন এসবিসিসি প্রকল্পকে সাধুবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ইউএসএআইডির জনসংখ্যা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও শিক্ষা অফিসের পরিচালক জারসেস সিধওয়া বলেন, ‘বাল্যবিবাহ একটি মানবাধিকার লঙ্ঘন। বাল্যবিবাহের মতো একটি জটিল সমস্যার অবসান ঘটানোর জন্য আমাদের সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে। এ জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। বাল্যবিবাহের অভিশাপ থেকে বাংলাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করতে ইউএসএআইডি কাজ চালিয়ে যাবে। বাল্যবিবাহ নির্মূলের জন্য বাংলাদেশ সরকার এবং অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করবে, যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভূমিকা রাখবে।’
ইউএসএআইডির উজ্জীবন এসবিসিসি প্রকল্পটি জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর কমিউনিকেশন প্রোগ্রামস দ্বারা বাস্তবায়িত হচ্ছে। সচেতনতামূলক এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে বাল্যবিবাহের কারণে অল্প বয়সে গর্ভধারণের ঝুঁকি এবং কন্যাশিশুদের উচ্চশিক্ষায় বিনিয়োগের সুফলগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে এই ক্যাম্পেইন বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি, বিদ্যমান ব্যবস্থাগুলোর মাধ্যমে সমাজে বাল্যবিবাহের ঘটনাগুলো প্রতিহত করা ও ভুক্তভোগীদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পেতে উদ্বুদ্ধ করবে।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আইইএম ইউনিটের পরিচালক আমির হোসেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস, নেদারল্যান্ডস দূতাবাস, মহিলা ও শিশু অধিদপ্তরের প্রতিনিধিরা, গণমাধ্যমকর্মী, সাংবাদিক এবং অন্যান্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন।