আমি কেন বন্ধুসভা করি

সাতক্ষিরায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করছেন বন্ধুরাফাইল ছবি: প্রথম আলো

যেখানে আলোর দেখা মেলে, সেখানে কে না আসতে চায়। সূর্যের আলো যেমন মেঘকে উপেক্ষা করে পৃথিবীকে আলোকিত করে, ঠিক তেমনি বন্ধুসভার আলোয় আলোকিত হই আমরা।
স্বভাবতই অনেকের কাছে প্রশ্ন জাগতে পারে, আমি কেন বন্ধুসভা করি? আমার দিক থেকে দুটি বিষয়কে এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া যেতে পারে। প্রথমত, সামাজিক জীব হিসেবে প্রত্যেকটা মানুষের দায়িত্ব সমাজকে নিজের সাধ্যমতো কিছু দেওয়া। যদি কবি-সাহিত্যিকদের ভাষায় বলতে হয়, তাহলে বলব, ‘তুমি পৃথিবীকে যেমন করে পেয়েছ, আগামীর জন্য তার চেয়েও একটু বেশি সুন্দর করে রেখে যাও।’ দ্বিতীয়ত, জন্মগতভাবে পৃথিবীতে কোনো মানুষ, কোনো অভিজ্ঞতা নিয়ে জন্মায় না। কর্ম, পরিস্থিতি, চিন্তা, বুদ্ধির দ্বারা তাকে জ্ঞান, অভিজ্ঞতা সঞ্চার করতে হয়। এ দুয়ের সম্মিলনের সেই জায়গা থেকে সমাজিক দায়িত্বপালনের পাশাপাশি নিজেকে একজন যোগ্য ও দক্ষ নাগরিক তথা মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে বন্ধুসভাতে আমার পথচলা।

প্রথম আলো বন্ধুসভা, একটি সামাজিক আন্দোলনের নাম। কতশত তরুণের স্বপ্নের বীজ বোনা, সুউচ্চ স্বপ্নের সোপান খুঁজে পাওয়া, এ দেশের অধিকারবঞ্চিত মানুষের দুঃসময়ে আশার আলো জ্বালানো একটি প্রদীপের নাম প্রথম আলো বন্ধুসভা। একটি জাতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হলো তারুণ্য। এ তারুণ্যের একটি বিরাট প্ল্যাটফর্মের নাম প্রথম আলো বন্ধুসভা। সারা দেশে প্রথম আলো বন্ধুসভা নানা ধরনের ইতিবাচক কাজ করে আসছে ২৩ বছর ধরে। সাহিত্য, শিল্প, সংস্কৃতি, খেলাধুলা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা এবং বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে অংশ নিয়ে দেশপ্রেম ও মানবকল্যাণে নিজেদের গড়ে তুলতে পারার একটি জাদুর নাম প্রথম আলো বন্ধুসভা।

বৃক্ষরোপণ, বস্ত্র বিতরণ, বন্যা-সিডর-আইলা-আম্ফানের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে কিংবা রোহিঙ্গা শিবিরে ত্রাণ নিয়ে ছুটে যান বন্ধুসভার বন্ধুরা। তেমনি মাদক কিংবা অ্যাসিড-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আন্দোলনে রাখেন অগ্রণী ভূমিকা। ভাষা প্রতিযোগ বা গণিত অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠানের সাফল্যের পেছনে থাকেন বন্ধুসভার নেপথ্যচারী কর্মীরা। আবার সুষ্ঠু ও দেশি সংস্কৃতি-সাহিত্যের চর্চার মধ্য দিয়ে নিজেদের আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়তেও বন্ধুসভার বন্ধুদের চেষ্টার কমতি নেই। বই পড়ার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করে বন্ধুসভা। জাতীয় দিবস উদ্‌যাপন, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, সমাজের পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়ানো, শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করা, লেখালেখি, সমাজের যত ইতিবাচক কাজ, কী করে না বন্ধুসভা? বন্ধুসভার কাজের পরিধি এত ব্যাপক যে এক শব্দে বা বাক্যে শেষ করা যাবে না। সবচেয়ে বড় সংগঠন বন্ধুসভা।

বন্ধুসভা নেতৃত্ব দিতে শেখায়, জীবনকে গড়তে শেখায়, নিজের মধ্যে মূল্যবোধ তৈরি করতে শেখায়। দায়িত্বশীলতা, সচেতনতা ও কর্তব্যবোধ জাগ্রত করে একজন ব্যক্তির মধ্যে ইতিবাচক চিন্তাধারার প্রসার ঘটিয়ে থাকে প্রথম আলো বন্ধুসভা। আমার বলি, বন্ধুসভা হলো স্বপ্নময় নতুন পৃথিবী তৈরির কারখানা। এখান থেকে একজন ব্যক্তি সুন্দর চিন্তার দক্ষ মানুষ হয়ে উঠতে পারেন। বন্ধুসভার একজন সদস্য হয়ে সমস্ত দেশের তারুণ্য শক্তির যে বিশাল বড় নেটওয়ার্ক, তার সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করার এ সুবর্ণ সুযোগ পাওয়াটা নিঃসন্দেহে সৌভাগ্যের ব্যাপার। এই যে এক বন্ধুসভার দুঃসময়ে অন্য বন্ধুসভার এগিয়ে আসা, এক বন্ধুসভার প্রগতিশীল কাজের সঙ্গে অন্য বন্ধুসভার বন্ধুদের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে নিজেকে উন্নত করার সুযোগ পাওয়া, দেশের বিরাট অংশ তারুণ্যের শক্তিকে এক প্ল্যাটফর্মে বেঁধে ফেলা—এ সবকিছু একমাত্র বন্ধুসভার দ্বারাই সম্ভব। সম্ভাবনাময়ী আমাদের এ জন্মভূমিকে সোনার বাংলায় পরিণত করার যে যুদ্ধ চলছে, একমাত্র বন্ধুসভাই তা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে দৃঢ়তার সঙ্গে।

প্রথম আলো যেমন শুধু একটি দৈনিক কাগজ নয়, এর চেয়ে বেশি কিছু, একটা সামাজিক প্রতিষ্ঠানের নাম। এ দেশের সত্য, ন্যায় ও একনিষ্ঠ একটি তথ্যভান্ডার হলো প্রথম আলো। এ দেশের স্বপ্নের কথা বলে প্রথম আলো। তেমনিভাবে বন্ধুসভা আজ আমার একটি পরিবার। আমার ভালো লাগা, ভালোবাসা আর বড় আবেগের নাম প্রথম আলো বন্ধুসভা। প্রসঙ্গক্রমে ছোট্ট করে উল্লেখ করি, সম্প্রতি বন্ধুসভার কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পর্ষদে সভাপতির দায়িত্বে এসেছেন উত্তম রায়। প্রথম যেদিন ভার্চ্যুয়ালি তাঁর সঙ্গে কথা হয়, কতটা দরদমাখা ভালোবাসার বন্ধনে আমাকে জড়িয়ে নিলেন। এ আদর আমি কোথায় পাব? বন্ধুসভা থেকে পাওয়া এত আদর, স্নেহ, ভালবাসার ঋণ আমি কী করে শুধিব? সমাজের ইতিবাচক চিন্তাশীল মানুষের সান্নিধ্য পাওয়াটাও বন্ধুসভার বন্ধুদের একটি সিস্টেমেটিক ব্যাপার।

বন্ধুসভার প্ল্যাটফর্মে যাঁরা যুক্ত হন, তাঁরা সবাই দেশের কাজে যুক্ত হন। একটি মানবিক মূল্যবোধে উজ্জীবিত মানুষের সম্মিলিত হওয়ার, নিজেদের গড়ে তোলার বা মানবতার কল্যাণে কাজ করার একটি মঞ্চ বন্ধুসভা। দেশের এই জেগে থাকা বন্ধুরা আজ একটি পরিবারে পরিণত হয়েছেন। সেই পরিবারের একজন হতে পেরে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি।