আমার বাবা

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

জীবনের ২৩তম বসন্তে এসেও আমি জানি না, বাবা কী জিনিস। বাবার আদর, ভালোবাসা, শাসন কেমন হয়! ছোটবেলা থেকে যখনই কাউকে তাঁর বাবার হাত ধরে হেঁটে যেতে দেখেছি, আমি অপলক চেয়ে দেখতাম। কী একটা শূন্যতা তৈরি হতো বুকের ভেতর, কেমন মন খারাপের ভাব। ছুটে চলে যেতে ইচ্ছা হতো দূরে কোথাও। মনের ভেতরে অসংখ্য প্রশ্ন ছোটাছুটি করত।

বিকেল হলে খেলতে যেতাম পাশের খেলার মাঠে, কতবার, কতজন তোমাকে নিয়ে প্রশ্ন করেছে! কী নাম? কই থাকে? কাঁর মেয়ে আমি? আদৌ কি তোমারই মেয়ে! কী যে কষ্ট আর অসহায় লাগত আমার। আমি ছুটে চলে আসতাম চোখভর্তি ভয়, আতঙ্ক আর অসহায়ত্ব নিয়ে। তোমার ওপর রাগ হতো না। কী হতো, আমি জানি না। আমি শুধু জানতাম, তুমি আছো, এখানে নয় অন্য কোথাও। সেখানে তোমার সব আছে, শুধু আমি নেই, আমার কোনো স্থান নেই। আমি চাইলেই তোমার কাছে ছুটে যেতে পারব না, তুমিও চাইলেই আসতে পারবে না। এটুকুই বুকে আঁকড়ে ধরে আমি দিন পার করতাম। এভাবেই কেটে গেছে আমার কতশত দিন। আমি না পাওয়াকে স্বীকার করে নিয়েই বেঁচে ছিলাম।

একদিন হুট করে তুমি বহু দূরে চলে গেলে, আমার পুরো পৃথিবী ওলট-পালট হয়ে গেল। আমাকে তুমি আজীবন শূন্যতায় ভাসিয়ে চলে গেলে। জানো বাবা, আজও যখন কোনো বাবা-মেয়েকে একসঙ্গে দেখি, আমার ভেতরটা দুমড়েমুচড়ে যায়। কিছুই তো চাইনি আমি তোমার কাছে, দূরে হলেও তুমি থাকতে বাবা, আমার জন্য। তুমি আছো, এটা ভেবেই আমি কাটিয়ে দিতাম বাকি জীবন। জানো, আমি আজও এত ভিড়ের মধ্যে হাতড়ে ফিরি তোমাকে। অনেক আদর, ভালোবাসা, শাসন পাওনা আছে। আমি জানি, কোথাও গেলেই আর তোমায় পাব না। বাবা, এই জন্মটা তুমি ছাড়া কাটিয়ে দিলাম। পরের জন্ম বলে যদি কিছু থাকে, তোমার সবটা সময় আমায় দিয়ো, তুমি শুধু আমার বাবা হয়ো।

লেখা: মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক, প্রথম আলো বন্ধুসভা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়