আবারও মুখর হবে প্রিয় ক্যাম্পাস

অপরাজেয় বাংলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রথম আলো ফাইল ছবি

এই তো মার্চের শুরুতেও কেমন হাপিত্যেশ করছিলাম—কবে একটু অবসর পেয়ে বাসায় আসতে পারব। তখন মাত্র নতুন সেমিস্টার শুরু হয়েছে, এরই মধ্যে প্রথম মিড শুরু হয়ে গেল, সেকি ব্যস্ততা! এরপর যখন কোভিড-১৯ নামের ভয়ংকর ভিনদেশি ‘অতিথির’ আগমনে ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে গেল, তখনো বেশ সানন্দেই ক্যাম্পাস ছেড়েছিলাম! কিন্তু কে জানত, এরপর ক্যাম্পাসে ফেরার অপেক্ষা এভাবে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে!
উৎকণ্ঠা আর অপেক্ষার প্রহর ক্রমেই দীর্ঘায়িত হয়ে প্রায় ছয় মাস হতে চলল। এত দিনের শূন্যতায় প্রিয় ক্যাম্পাসও কি বড্ড অভিমান করে আছে? সুনসান নীরবতায় সে–ও কি খুঁজে ফেরে প্রিয় মানুষগুলোর পদচারণ? মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ আজও সুউচ্চে দাঁড়িয়ে আছে, সারি সারি লাল বাস ক্যাম্পাসে ঢোকার অপেক্ষায়! কোলাহলপূর্ণ হলগুলোর এত দীর্ঘ অবসর শেষ কবে ছিল, কে জানে!

শুনেছি, মল চত্বর নাকি ছেয়ে গেছে সবুজ ঘাসের আবরণে, তাতে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে হরেক রকমের ফুল। এমবিএ বিল্ডিংয়ের বারান্দা থেকে কৃষ্ণচূড়ার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করা এবার ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেল! সারি সারি ঝরে যাওয়া কৃষ্ণচূড়া এবারও কি লালগালিচায় পরিণত হয়েছে? আচ্ছা, ক্যাম্পাস শ্যাডো কি ভুলতে বসেছে শীতের জন্য অপেক্ষারত শিক্ষার্থীদের সেই চিরচেনা কোলাহল?

মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রথম আলো ফাইল ছবি

বহুদিন কলাভবনের সেই গোলকধাঁধায় নেই হারিয়ে যাওয়ার ভয়, বটতলা আর আমতলাও তাই দীর্ঘ অবসরে। ঘাস, ফুল আর ঝুলে থাকা লতাগুল্মে সমাজবিজ্ঞান চত্বরও হয়তো অসামাজিক হয়ে আছে! হাকিম চত্বরের ধুলামাখা জায়গাটাও নাকি এখন ঘাসেদের দখলে। চারুকলার সেই উৎসবমুখর মনোমুগ্ধকর পরিবেশও যেন নির্জনতায় নিষ্প্রাণ হয়ে আছে। যে টিএসসির দেয়ালজুড়ে রোজ চায়ের আড্ডা বসত, সেটিও হয়তো থমকে আছে!

সদা চঞ্চল টিএসসিজুড়ে নেই গানের আসর, মাঠজুড়ে কোলাহল আর আড্ডায় পার হওয়া বিকেলগুলো এখন শুধুই স্মৃতি! ওদিকে খাঁ খাঁ করছে কার্জনের সারি সারি লাল দালান, নেই গোল হয়ে আড্ডারত মানুষগুলো, মুখরিত পুকুরপাড়টাও আজ শূন্যতার দখলে। মোকাররম ভবনের হলুদ ফুলগুলো হয়তো নীরবেই যাচ্ছে ঝরে। নিঃসঙ্গতার নিদারুণ কষ্টে ফুলার রোড আর ভিসি চত্বর। অপরাজেয় বাংলা, রাজু ভাস্কর্য ঠায় দাঁড়িয়ে আছে নিস্তব্ধ বোবাকান্নায়!

কার্জন হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রথম আলো ফাইল ছবি

শতবর্ষের গৌরবময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নীরবে–নিভৃতেই শতবর্ষে পা রেখেছে। ক্যাম্পাসের প্রতিটি আঙিনা হয়তো ব্যাকুল হয়ে অপেক্ষা করছে, অমানিশা কেটে গিয়ে কবে থেমে থাকা সময়টা আবার চলতে শুরু করবে, চেনা মুখগুলোর পদার্পণে মিছিল, মিটিং, স্লোগান, আড্ডা, ঘোরাঘুরি, কোলাহল, লেখাপড়া, গান, থিয়েটার, নাটক, উৎসবে আবারও মুখর হবে প্রিয় ক্যাম্পাস।

সাদিয়া ইসলাম স্মৃতি: শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়