‘আজও দেরি করে এলে?’ অনেকটা রাগের স্বরে অর্ণবকে বলল সুভা।
‘কী আর করব বলো! রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিল।’
‘জ্যাম ছিল নাকি কলিগদের সঙ্গে বসে আড্ডা দিচ্ছিলে?’
‘আবার শুরু কোরো না তো!’
সুভা আর অর্ণব বিয়ে করেছে দুই বছর হলো। দুজনই চট্টগ্রামের। তবে চাকরির সুবাদে ছয় মাস হলো খুলনায় থাকতে হচ্ছে। আগে অর্ণবের কাছে খুব বায়না করত সুভা খুলনা শহর একটু ঘুরে দেখানোর জন্য। আজকাল অর্ণব একটু রেহাই পেয়েছে। পাশের বাসায় নতুন ভাড়াটে এসেছে। ওই পরিবারের ভাবির সঙ্গে সুভার ভালো ভাব জমেছে। দুজনই মাঝেমধ্যে ঘুরতে বের হয়।
‘তারপর, আজ কী কী করলে?’
‘ভাবির সঙ্গে আজ নদীর পাড়ে গেলাম। জানো, নদীটা না ঠিক আমাদের কর্ণফুলীর মতো।’
‘আচ্ছা, তা ওনারা কি খুলনার নাকি?’
‘হ্যাঁ।’
‘ভালো। তাহলে তো ওনারা সব জায়গাই চেনেন!’
‘তা তো বটেই।’
অর্ণব বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। মুঠোফোন বের করে মেসেঞ্জারে ঢোকে। কলেজের চ্যাট গ্রুপে একটা ছবি ভেসে ওঠে। পুরোনো ছবি। সব বন্ধুই আছে। হঠ্যাৎ একজনকে দেখে অর্ণব থমকে দাড়াঁয়।
তখন কলেজে নতুন। একবার এক প্র্যাকটিকেলের তারিখ মিস করে ফেলে। তার সঙ্গে আরেকজন। দুজনই মিস করে সেই তারিখ। স্যারও দুজনকে আজ না পরশু বলে বলে দেরি করাতে থাকেন। ১০ দিন পর অবশেষে তারা সাইন করাতে পারে। এই ১০ দিনে অর্ণব আর নীলার মধ্যে অনেক ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়। দুজনই একসঙ্গে ঘোরাঘুরি, কথা ভাগাভাগি করতে থাকে।
এই ভালো বন্ধুত্ব একসময় ভালোবাসায় রূপ নেয়। কলেজের পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়। নীলা মেডিকেলে চান্স পেয়ে রাজশাহীতে চলে যায়। অর্ণব চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবুও অর্ণব মাসে একবার হলেও রাজশাহীতে যেত। নীলার সঙ্গে হাত ধরে রাজশাহী শহরে ঘুরে বেড়াত। ঘুরে বেড়াত পদ্মার পাড়ে, বরেন্দ্র জাদুঘরে।
নীলার বাবা সব জেনে যায়। নীলাকে অনেক বকাবকি করে। অর্ণবের ওপর অনেক হামলা–মামলা চলে। কারণ, দুজন ছিল ভিন্ন ধর্মের। অর্ণব পরিবারের দিকে থাকিয়ে কিছুদিন চুপচাপ থাকে। তবে নীলার খোঁজখবর নিত। একদিন জানতে পারে, নীলার বিয়ে হয়ে গেছে রাজশাহী মেডিকেলের এক চিকিৎসকের সঙ্গে।
হঠাৎ সুভা পেছন থেকে এসে অর্ণবকে ডাক দেয়—
‘কী হলো, কী ভাবছ বলো তো?’
‘না এমনি।’
সুভা হাতটা জড়িয়ে ধরে অর্ণবের কাঁধের ওপর মাথা রাখে। ঠিক নীলাও এমনভাবে তার কাঁধের ওপর মাথা রাখত। হঠাৎ কলবেল বেজে ওঠে।
‘এই অসময় কে এল বলো তো?’
‘দাড়াঁও আমি দেখছি।’
অর্ণব দরজা খোলে। কিছুক্ষণের জন্য থমকে যায়। দরজার সামনে দাঁড়ানো নীলা। সুভা পেছন থেকে আসে।
‘আরে ভাবি ঘরে আসেন। আপনাকে বলেছিলাম না, উনি আমার স্বামী, অর্ণব।’
‘আর উনি হচ্ছেন ভাবি, যার কথা তোমাকে বলেছিলাম।’
নীলা বলে, ‘না পরে আসব। অর্ণবের এখনো খাওয়া হয়নি।’
সুভা অর্ণবকে বলে, ‘হ্যাঁ জানো, ভাবির ছেলের নাম তোমার নামে। ভাবির ছেলের নামও অর্ণব।’
সরকারি সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম