মেলকুমে একদিন

মেলকুমে লেখক
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

মেলকুমে প্রবেশের কিছুটা পথ আগেই, পানি বেশ ঠান্ডা পাওয়া গেল ট্রেইলে। না জানি মেলকুমে কী পরিমাণ ঠান্ডা! তার ওপর এখানে অনেকের হারিয়ে যাওয়ার গল্প শুনেছি।

বৃহস্পতিবার অফিস শেষে সবারই কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম কিংবা ঢাকায় যাওয়ার হিড়িক পড়ে। বাসে উঠেই ফোন দিলাম রিজবীকে, ‘মেলকুম যাবা?’ সে একবাক্যে রাজি।

রাত তখন ১১টা। কক্সবাজার থেকে পুরোটা সময় ঘুমিয়ে এসেছি বাসে। নতুন ব্রিজে পৌঁছালে ঘুম ভেঙে গেল। নতুন ব্রিজ এলেই মনটা অন্যরকম আনন্দে ভরে ওঠে। হয়তো সপ্তাহ শেষে ঘরে ফিরে প্রিয় মানুষদের মুখের হাসি দেখার খুশিতে।

মেলকুমের যেখানে সূর্যের আলো সরাসরি প্রবেশ করেছে
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

রাতে বাসায় ফিরে খাওয়াদাওয়া আর সবার সঙ্গে গল্পগুজব শেষে শুয়ে পড়লাম। পরদিন ঠিক সকাল সাতটায় অ্যালার্ম বেজে উঠল। বাসার কেউ এখনো জানে না আমি বের হব। আমাকে অবাক করে দিয়ে রান্নাঘরে গিয়ে দেখি, আব্বা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হেলান দিয়ে ভাত খাচ্ছেন!
আমাকে দেখামাত্রই বলে উঠলেন, ‘ক্ষুধা লাগছে রে অনেক।’
আমি বললাম, ‘আজকে বন্ধের দিন ঘুমাবা।’
‘খেয়েই ঘুমিয়ে পড়তেছি। তুই কোথাও যাচ্ছিস?’ আব্বার জবাব ও জিজ্ঞাসা
‘হু। একটু বের হই। বিকেলের মধ্যেই ফিরব।’

চট্টগ্রাম নগরীর এ কে খানে গিয়ে দেখা মিলল বন্ধুসভার বন্ধু রিজবী আর তার আরেক বন্ধু অসিমের সঙ্গে। আমি, রিজবী আর চট্টগ্রাম বন্ধুসভার স্বপ্নীল—আমরা ২০১৭ সাল থেকেই সীতাকুণ্ড, মিরসরাই পাহাড় ও ঝরনায় দাপিয়ে বেড়ানো ডানপিটে ভ্রমণপিপাসু।

নাশতা শেষে বাসে উঠেই আমাদের গন্তব্য মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ এলাকার সোনাপাহাড় বাজারে। ভাড়া ১১০ টাকা। সোনাপাহাড় বাজারে নেমে একটি দোকানে চা খেয়ে, কলা আর পানি নিয়ে রওনা হলাম মেলকুম ট্রেইলের উদ্দেশে। প্রধান সড়ক থেকে মেলকুমের মুখে যেতে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লাগে।

রেললাইন থেকে অনেকটা পথ হাঁটার পর একটা বড় মাঠের মতো পড়বে। মাঠে প্রবেশের আগেই একটা ছোট্ট ঝিরি। সেই ঝিরি ধরে কিছুদূর গেলেই মেলকুম।
মেলকুম প্রবেশের আগে আপনার হাতে দুটি অপশন আসবে। এক, পাহাড় বেয়ে উঠে পরে দড়ি ধরে ঝিরিতে নামা। দুই, ট্রেইল ধরে ভেতরে প্রবেশ করা। আমরা ট্রেইল ধরেই এগোতে লাগলাম। আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সাক্ষী হতে থাকলাম ভয়ংকর সৌন্দর্যের গিরিখাত দর্শনের।

দুপাশে পাহাড় আর মাঝখানে সরু চিকন ঝিরি পথ
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

দুপাশে পাহাড় আর মাঝখানে সরু চিকন ঝিরি পথ। সে পথ ধরেই এগোতে থাকলাম। কোথাও কোথাও ভেলা রয়েছে। চাইলে চড়তেও পারেন ভেলায়। মেলকুম দিনের আলোতেও অন্ধকার থাকে। যেখানে সূর্যের আলো সরাসরি প্রবেশ করেছে, সেখানে সৌন্দর্যকে এক শব্দে 'অপার্থিব’ বলে বর্ণনা করা যায়।
আমি চিকন শরীর নিয়ে খুব সহজে ট্রেইলে দাপিয়ে বেড়াতে পারলেও রিজভী বেশ বেগ পেয়েছে। অসিমও খানিকটা।

মেলকুমে শীত কিংবা বৃষ্টি না থাকলেই ভ্রমণপিপাসুদের আসতে উৎসাহী করব। বর্ষা কিংবা বৃষ্টিতে ট্রেইল হয়ে উঠতে পারে ভয়ংকর। তাই খোঁজখবর নিয়ে মেলকুমে যাওয়ার পরামর্শ রইল।

বন্ধু, চট্টগ্রাম বন্ধুসভা