শুকনা মৌসুমেও হাকালুকি হাওরের সৌন্দর্য মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে

হাকালুকি হাওরে লেখকছবি: লেখকের সৌজন্যে

ইন্টারমিডিয়েট পড়ার সময় ইংরেজি প্রথম পত্র বইয়ে প্রথম হাকালুকি হাওর সম্পর্কে জানতে পারি। সেই থেকে হাকালুকি হাওর দেখার প্রবল কৌতূহল। কৌতূহল থেকেই গত বছরের ১০ নভেম্বর হাওরে যাওয়া। পড়েছিলাম বর্ষা মৌসুমে এই হাওরে কালবাউস, বোয়াল, রুই, ঘাঘট, পাবদা, চাপিলাসহ আরও হরেক রকমের মাছ পাওয়া যায়। এখানে কুশিয়ারা থেকে হাকালুকির বিল ও উপনদীর দিকে মাছের ঘন ঘন চলাচল থাকে।

বাংলাদেশের বৃহৎ হাওর হাকালুকি হাওর। এটি এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম মিঠাপানির জলাভূমি। এর আয়তন ১৮ হাজার ১১৫ হেক্টর; এর মধ্যে শুধু বিলের আয়তন ৪ হাজার ৪০০ হেক্টর। এটি মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা (৪০%), কুলাউড়া (৩০%), এবং সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ (১৫%), গোলাপগঞ্জ (১০%) এবং বিয়ানীবাজার (৫%) জুড়ে বিস্তৃত। ভূতাত্ত্বিকভাবে এর অবস্থান উত্তরে ভারতের মেঘালয় পাহাড় এবং পূর্বে ত্রিপুরা পাহাড়ের পাদদেশে। ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের কারণে উজানে প্রচুর পাহাড় থাকায় হাকালুকি হাওরে প্রায় প্রতিবছরই আকস্মিক বন্যা হয়। এই হাওরে ৮০-৯০টি ছোট-বড় ও মাঝারি বিল রয়েছে। শীতকালে এসব বিল ঘিরে অতিথি পাখিদের বিচরণে মুখর হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। অতিথি পাখি দেখতে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস হচ্ছে ভ্রমণের আদর্শ সময়।

ঘিলাছড়া ইউনিয়নের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই এলাকার বেশির ভাগ মানুষই মৎস্যজীবী। বর্ষায় সবাই মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত থাকে। শীত মৌসুমে হাওর-বিল শুকিয়ে গেলে তখন অন্য কাজ করে। অতিথি পাখি কেমন আসে? এই প্রশ্ন করলে সোনিয়া আক্তার নামের একজন স্কুলশিক্ষিকা বলেন, ‘আগে শীত মৌসুমে এই হাওরে হরেক রকমের অতিথি পাখি আসত। পাখির কলকাকলিতে চারপাশ মুখরিত থাকত। কিন্তু এখন তুলনামূলকভাবে কম আসে। এর অন্যতম কারণ হলো শিকারিরা এখনো আইন অমান্য করে নির্বিচার পাখি শিকার করছে।’

সরেজমিনে গিয়ে দেখতে পাই, হাওরে পানির চলাচল কিংবা স্রোত কোনোটাই নেই। এখন পুরোপুরি শুকনা; খণ্ড খণ্ড কিছু অংশে অল্প করে পানি জমে আছে। সেখানে জেলেদের নৌকাগুলো অলস পড়ে আছে। আসন্ন বর্ষা উপলক্ষে জেলেরা নৌকা মেরামত করছে। কেউবা নৌকায় আলকাতরার রং দিচ্ছে।

এই বিস্তীর্ণ জলাশয় শুকনা হলেও সৌন্দর্যের খুব একটা ঘাটতি দেখা যায়নি! যত দূর চোখ যায়, শুধু হাওর আর হাওর; কিছু কিছু অংশে পানি জমে থাকায় ঝাঁক বেঁধে পাখিরা ডুব দিয়ে মাছ শিকার করছে, যা দেখতে খুবই মনোমুগ্ধকর। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাওরে অতিথি পাখিদের বিচরণ বিশেষভাবে নজর কাড়ে। কেউ যদি এই নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান, তাহলে চলে যেতে পারেন সিলেট থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি হাকালুকি হাওরে।

বন্ধু, সিলেট বন্ধুসভা