স্বাধীনতার একজন স্বপ্নদ্রষ্টা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানপ্রতিকৃতি: মাসুক হেলাল

বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যে কজন মানুষ স্বপ্ন দেখেছিলেন, তাঁদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অন্যতম। একজন সফল অবিসংবাদিত নেতা, যাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছিল ১৯৭১-এর সাত কোটি মানুষ। দীর্ঘ ৯ মাস ৩০ লাখ তাজা প্রাণের বিনিময়ে এসেছিল আমাদের স্বাধীনতা। শেখ মুজিব ছিলেন সেই স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা।

নায্য অধিকার আদায় ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাঁর অকপট প্রতিবাদ লক্ষ করা যায় শৈশব থেকেই। ১৯৩৮ সালে তিনি যখন গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলের ছাত্র, তখন স্কুল পরিদর্শন করতে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। পরিদর্শন শেষে তাঁদের পথ আটকে একটা দাবি নিয়ে দাঁড়ালেন কিশোর মুজিব। দাবি হলো, স্কুলের ছাত্রাবাসের ছাদ থেকে পানি, তা মেরামত করে দিতে হবে। দাবি শুনে উপস্থিত দুজন অবাক ও বিস্মিত হলেন। অবশেষে ছাত্রাবাসও মেরামত হয়ে গেল। এ ঘটনায় কিশোর মুজিবের নেতৃত্ব ও সাহসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়।

তাঁর লেখা তিনটি বই—‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘আমার দেখা নয়াচীন’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’—বইগুলোতে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের সঙ্গে প্রকাশ পায় দার্শনিক চরিত্র। যেমন ‘আমার দেখা নয়াচীন’ বইটি পড়লে বোঝা যায়, দার্শনিক চোখে তিনি নয়াচীনের রাষ্ট্রব্যবস্থা দেখেছেন, সামাজিক দিকগুলো বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁর লেখা তিনটি বইয়ে সহজ–সাবলীল ভাষায় জীবনের প্রতিটি ঘটনাকে যেভাবে বর্ণনা করেছেন, তা যেন রাজনৈতিক দিকটার আড়ালের অনবদ্য লিখনশৈলীর সাহিত্যিক বঙ্গবন্ধুর প্রতিনিধিত্ব করে।

বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শিতার পরিচয় পাওয়া যায় ৭ মার্চের ভাষণে। শত্রুর আক্রমণকে উপেক্ষা করে বজ্রকণ্ঠে তিনি সেদিন যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তা ইতিহাসের সর্বকালের অন্যতম সেরা ভাষণ। সেদিন লাখো মানুষ তাঁর মুখে স্বাধীনতার ঘোষণা শুনতে এসেছিল, সংখ্যাগরিষ্ঠদের মুখে মুখে রটিয়ে পড়েছিল স্বাধীনতা ঘোষণার কথা। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সেদিন সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। কারণ, তিনি জানতেন শত্রুপক্ষ আক্রমণের জন্য মুখিয়ে আছে। তাই অত্যন্ত কৌশলে তিনি একদিকে স্বাধীনতার কথা বলেছেন, অন্যদিকে যুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।

সেদিন শেখ মুজিব যুদ্ধজয়ের ট্রেনটিকে রেললাইনে তুলে যাত্রা শুরু করলেন, তাঁর দেখানো লাইন ধরেই ১৬ ডিসেম্বর ট্রেন পৌঁছায় বিজয়ের স্টেশনে।

এই স্বাধীনতা অর্জন করতে গিয়ে ১৪ বছর কাটিয়েছেন কারাগারে। মানুষের জন্য তিনি ছিলেন অন্তঃপ্রাণ, মানুষের দুঃখে কেঁদে উঠত তাঁর মন। তিনি যখন স্কুলে পড়তেন, তখন একবার টুঙ্গিপাড়ায় ভালো ফসল হয়নি, কৃষকদের মনের দুঃখ কিশোর মুজিবের হৃদয় নাড়া দেয়। নিজেদের গোলা থেকে ধান নিয়ে সেই সব কৃষকের মধ্যে ছড়িয়ে দেন। দুঃখী বাঙালির মুখে হাসি ফোটাতে চাওয়াটা শুরু হয়েছিল শৈশব থেকেই।

‘মুজিব একটি জাতির রূপকার’ সিনেমায় দেখেছি শেখ মুজিবের জীবনগাথা। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কতটা বলিষ্ঠ ছিলেন তিনি, তা পর্দায় বেশ ভালোভাবেই ফুটে উঠেছিল। পুরো সিনেমায় শুধু একটা কথা মাথায় ঘুরছিল, হোয়াট আ পারসোনালিটি হি হ্যাভ!

আজ ১৭ মার্চ, শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি এই মহান নেতাকে। যিনি জন্ম নিয়েছিলেন বলে একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হতে পেরেছি আমরা।

বন্ধু, ভৈরব বন্ধুসভা