গরমের সুপারফুড তরমুজ

তরমুজ জুস

লাল টকটকে রসাল, পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ, প্রায় সবার পছন্দের সুস্বাদু গ্রীস্মকালীন ফল তরমুজ। তীব্র গরমে শরীরের পানিশূন্যতা ও ক্লান্তিভাব দূর করতে তরমুজ হলো আদর্শ ফল। এই ফলের রস ঠান্ডা, তাই এটি মনকে শান্ত রাখে এবং রাগ ও চাপ কমাতে ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি মৌসুমি এই ফলে রয়েছে নানা ধরনের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা।

পুষ্টি উপাদান

তরমুজের প্রায় ৯২% পানি, ৬% প্রাকৃতিক চিনি ও বাকি ২% অন্যান্য উপাদান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ভিটামিন ‘সি’, কোলিন, অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, লাইকোপেন, কিউকারবিটাসিন-ই, সাইট্রুলিন, কিউফারটিন, নিয়াসিন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, লৌহ, ভিটামিন ‘এ’, ভিটামিন ‘বি’, ম্যাগনেশিয়ামসহ আরও বিভিন্ন খনিজ, মিনারেলস, ফাইবার ও অ্যামাইনো অ্যাসিড। এ ছাড়া তরমুজের বীজে রয়েছে মনোআনস্যাচুরেটেড ও পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড; যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান।

উপকারিতা

ক্যানসার প্রতিরোধ ও প্রতিকারে সাহায্য করে: তরমুজে থাকা লাইকোপেন ও কিউকারবিটাসিন-ই প্রোস্টেট, কোলন, মলদ্বার, ফুসফুস ও ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। কিউকারবিটাসিন-ই ক্যানসারযুক্ত কোষগুলো অপসারণ করে টিউমারের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করে।
হার্ট সুস্থ রাখে: লাইকোপেন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, উচ্চ পরিমাণে থাকা সাইট্রুলিন, তরমুজের বীজে থাকা মনোআনস্যাচুরেটেড ও পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যামাইনো অ্যাসিড এল-আরজিনিন রক্তপ্রবাহ ধমনির কার্যক্রম স্বাভাবিক রেখে এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে হার্ট সুস্থ রাখে।
রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়: ভিটামিন ‘সি’, মিনারেলস, ভিটামিনস, অ্যামাইনো অ্যাসিড, অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট দূষিত পদার্থ বের করে দিয়ে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে শরীর সুস্থ রাখে।
দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়: এর ক্যারোটিনয়েড ও লাইকোপেন চোখ ও দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। চিকিৎসকদের মতে, ক্যারোটিনয়েড রাতকানা রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
প্রাকৃতিক ভায়াগ্রা: তরমুজ ছোট ছোট করে কেটে নিয়ে, লেবুর রস মিশিয়ে ব্লেন্ড করে শরবত বানিয়ে খেলে তা শরীরে প্রাকৃতিক ভায়াগ্রার মতো কাজ করে এবং শরীরে ইমিউন বুস্টারের মতো কাজ করে।
পানিশূন্যতা দূর করে: প্রচুর পানিযুক্ত ফল হওয়াতে গরমের খরতাপে তৃষ্ণা মেটানোর পাশাপাশি শরীরকে পানিশূন্য হতে দেয় না। এ ছাড়া মাসল ক্রাম্প প্রতিরোধ করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ: ক্যালরির পরিমাণ কম থাকাতে চর্বি ও মেদ কমিয়ে ওজন হ্রাস করে এবং নিয়ন্ত্রণে রাখে।
ডায়াবেটিস রোগীদের উপকারী: ক্যালরির পরিমাণ কম ও প্রাকৃতিক চিনি থাকার কারণে তরমুজ ডায়াবেটিস রোগীরাও খেতে পারেন, এটি তাদের জন্য উপকারী।
প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে: ভিটামিন ‘সি’, ‘লাইকোপেন’, অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট শরীরের দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ কমিয়ে সুস্থ রাখে।

এ ছাড়া পেশির ব্যথা কমানো, ত্বক সুস্থ ও সবল রাখা, চুল শক্ত রাখা, কোষের ক্ষয়পূরণ, হজম স্বাভাবিক রাখা ও রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে তরমুজ। সুতরাং এই গরমে নিয়মিত তরমুজ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন।

শিক্ষার্থী, খাদ্য প্রযুক্তি ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগ, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়