ডাকবাক্স

চিঠি ফেলার জন্য ডাকবাক্স দেওয়া হলেও এখন আর কেউ চিঠি ফেলেন নাছবি: প্রথম আলো

প্রিয় ডাকবাক্স,

একসময় তুমি ছিলে শত প্রেমিকের প্রেমানুভূতি প্রকাশের মাধ্যম। শত প্রেয়সীর বাঁধভাঙা অবুঝ আবেগমাখা হলুদ খামে গচ্ছিত ভালোবাসার প্রজাপতি কিংবা অভিমানে মোড়ানো বিরহকথায় সাজানো নীল খাম। শত সহস্র হৃদয়ের চাওয়া–পাওয়া ও আবদারে অনন্য এক মাধ্যম। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারে একটু একটু করে ক্রমেই তোমার প্রয়োজন ক্ষীণ হতে হতে এখন ফুরিয়েছে প্রায়। হারিয়ে গেছে তোমার টুকটুকে লাল বর্ণের জৌলুশের আকর্ষণ।

তবে তুমি এমন ভেবো না যে হারানোর কষ্টগুলো কেবল একা তোমারই। তুমি হয়তো জানো না, এই কষ্টে আমিও অহর্নিশ তোমার মতোই দগ্ধ হই। যখন থেকে একটু একটু করে তোমার ভেতরটা ফাঁকা হতে শুরু করল, চিঠি শূন্যতায় হাহাকার করেছে তোমার বিষাদী হৃদয়। তখন থেকেই আমার চারপাশটাও বড় বেশি অনুভূতিহীন আর আবেগশূন্য মনে হয়। একান্ত অনুভূতিগুলোও হারিয়েছে ভাষায় প্রকাশের সুমিষ্ট মাধুর্য। বহু নর-নারীর জীবন থেকে হারিয়ে গেছে প্রজাপতি আঁকা সেই হলুদ খাম। যেটিতে করে পুষ্প অঙ্কিত সুবাসিত চিরকুটে গাঁথা হতো হৃদয়ে হৃদয়ে শব্দের আদান–প্রদান।

এখন ই–মেইল কিংবা মুঠোফোনের খুদে বার্তায় কেবলই জরুরি সংলাপ। তাতে নেই কোনো অনুরণন জাগানো ভূমিকা কিংবা হৃদয়ছোঁয়া সমাপ্তি। নেই প্রেম সোহাগি রাগ অনুরাগ।

তুমি হয়তো জানো না, তোমার সচলাবস্থায় প্রিয়জনেরা দূরে থেকেও যেন একে অন্যের পাশে ছিল। এখন পাশে থেকেও তারা বড্ড অচেনা হয়ে যায়। তোমাকে খুব মনে পড়ে জানো? ভীষণ মনে পড়ে সেই লাল টুকটুকে ডাকবাক্স, সেই প্রজাপতি আঁকা হলুদ খামের সুগন্ধিত গোটা গোটা অক্ষরের আবেগপ্রবণ আদান–প্রদান।

ইতি
তোমার বিষাদে এক বিষাদিনী

সেক্টর-১৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা