কেন কিছু মানুষ সব সময় দেরি করে

প্রতীকী ছবিসংগৃহীত

প্রতিটি বন্ধু গ্রুপে এমন একজন থাকে, যে সব সময় সব কাজে দেরি করে আসে। হোক সেটা অনুষ্ঠান, আড্ডা, ক্লাস কিংবা অ্যাসাইনমেন্ট—তার দেরি করে উপস্থিত হওয়ার কোনো ব্যত্যয় ঘটে না। আবার কিছু লোক কর্মক্ষেত্রেও সর্বদা দেরি করে আসে। কখনোই সময়মতো পৌঁছাতে পারে না। কারণ জিজ্ঞেস করলে অসংখ্য অজুহাত দেবে। কিন্তু কেন এমন ঘটে?

জ্ঞানভিত্তিক আচরণগত থেরাপি সাইকোথেরাপিস্ট এবং আই মুভমেন্ট ডিসেনসাইটেশন অ্যান্ড রিপ্রসেসিং (ইএমডিআর) বিশেষজ্ঞ সমিয়া জামান নিউইয়র্ক পোস্টকে বলেন, ‘যখন কেউ দেরি করে, তার মানে এই নয় যে সে কাজটা সম্পন্ন করার চেষ্টা করছে না অথবা তারা অন্য কারও অনুভূতি নিয়ে মাথা ঘামায় না। আবার কিছু লোক আছে, যারা জন্মগতভাবেই আশাবাদী। তারা বিশ্বাস করে, ব্যস্ত সূচির মধ্যেই সব কাজ ম্যানেজ করতে পারবে।’

দেরি করে আসার কারণে আবার সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে অহরহ। রাজধানীর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুপম। অনার্স শেষ করে এখন মাস্টার্সে পড়ছে। তাঁর বয়সী অনেকেই চাকরি করছে। কিন্তু সে এখনো বেকার। টিউশনি করে হাতখরচ চালাতে হয়। তার একটা বদভ্যাসও আছে। যেকোনো কাজে দেরি করে আসাটা রুপমের জন্য নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ জন্য অসংখ্য ঝামেলা পোহাতে হয় তাকে। সম্প্রতি তার প্রেমিকাও তাকে ছেড়ে চলে গেছে। গল্পটি কাল্পনিক হলেও এমন অনেক বাস্তব ঘটনা রয়েছে।

২০১৪ সালের ইউগভ সার্ভের এক জরিপে দেখা যায়, সপ্তাহের অন্তত এক দিন প্রতি পাঁচজন আমেরিকানের মধ্যে একজন অফিসে দেরি করে আসে। লেট! এ টাইমবেন্ডার্স গাইড টু হোয়াই উই আর লেট অ্যান্ড হাউ উই ক্যান চেঞ্জ বইয়ের লেখক গ্রেস প্যাসি বিবিসিকে বলেন, ‘ব্যক্তিত্বের পরিপ্রেক্ষিতে এটা ঘণ্টা বক্ররেখা। কিছু মানুষ আছে, যাদেরকে সময় রক্ষাকারী বলা যায়। সবকিছু দ্রুত করার জন্য তারা উদ্বিগ্ন থাকে। আরেক ধরনের লোক আছে, যাদেরকে আমি বলি টাইমবেন্ডার। টাইমবেন্ডাররা কোনো রুটিন মেনে চলে না। কোনো পরিচিত কাজ পছন্দ করে না। সহজেই বিরক্ত হয়ে যায়। যখন কোনো কিছুতে খুব বেশি আগ্রহ জন্মে, তখনই কেবল তারা মনোযোগ দেয়। আর যদি সময় বেধে দেওয়া থাকে, তাহলে কাজে আরও গতি বাড়ে।’
‘যদি আপনি অফিসে হাঁটাহাঁটি করেন এবং একজন টাইমবেন্ডারের কাছে যান, দেখবেন কেবল তার টেবিলটাই অগোছালো। কারণ, আরেকটা কাজ শুরু করার আগে তারা অন্য কাজটি শেষ করে না।’

দ্য এক্সপেকটেশন ইফেক্ট বইয়ের ব্রিটিশ লেখক ডেভিড রবসন বিবিসিকে বলেন, ‘যখন এটি দেরি করার ক্ষেত্রে আসে, তাদের প্রধান ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি হলো বিবেক। বিবেক হলো ব্যক্তিত্বের সবচেয়ে বড় পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের একটি। বাকি চারটি বৈশিষ্ট্য হলো সম্মতি, বহির্মুখী, উন্মুক্ততা ও স্নায়বিকতা। সুতরাং এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
গ্রেস প্যাসি বলেন, ‘সময় নিয়ে অধিকাংশ মানুষের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। প্রতিটি মিনিট আমাদের জন্য একই দৈর্ঘ্যের নয়। সময় দ্রুত বাড়তে পারে, আবার ধীরগতিও হতে পারে। আমরা একটা জিনিসে গভীরভাবে ডুবে যেতে পারি এবং সময়ের দিকে আর খেয়াল থাকবে না। অন্যদিকে যদি কাজের শেষ সময় বেধে দেওয়া থাকে, তখন আমাদের কাজের গতি বেড়ে যায়।’

‘তবে আমরা কিন্তু সব কাজে দেরি করি না। যখন প্রয়োজন হয়, আমরা ঠিক সময়মতো সবকিছু করি। এর মানে হচ্ছে দেরি হওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। সবচেয়ে বাজে টাইমবেন্ডিং হচ্ছে যখন আমরা ঘুমাতে যাই। কারণ, তখন ঘুমানোর সময়ের কোনো সীমাবদ্ধতা থাকে না। এর প্রভাব পড়ে বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে। সুতরাং, যখন আমরা বলি সময়ের মধ্যে পৌঁছে যেতে পারব, তখন কাছের মানুষদের কেবল আমাদের কষ্ট দেওয়া হয়। কারণ, তারা সব সময় দেখে আমরা দেরি করি।’
যখন কেউ জানে যে সবাই তার সম্পর্কে এটা ধারণা করে যে সে দেরি করবে, তখন ওই ব্যক্তি আসলেই দেরি করে। কারণ, তার মাথায় এ বিষয়টা বসে গেছে। এটা থেকে চাইলেও সহজে বের হতে পারে না ওই ব্যক্তি।