মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। প্রযুক্তির উন্নতি, চিকিৎসাব্যবস্থার প্রগতি এবং জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের ফলে মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। নতুন প্রজন্মের আগমনে মানুষ বাড়ছে তো বটেই, পাশাপাশি পুরোনো প্রজন্মও দীর্ঘজীবী হচ্ছে।
মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে উপস্থিত হচ্ছে। শহরগুলোয় জনসংখ্যার ঘনত্ব বেড়েছে। ফলে যানজট, পরিবেশদূষণ ও আবাসনসংকটের মতো সমস্যা তৈরি হচ্ছে। জীবনের মৌলিক চাহিদাগুলোর ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। বিশুদ্ধ পানির অভাব, খাদ্যসংকট এবং স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার অভাবে মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে।
এ সমস্যাগুলোর মূল কারণ হলো জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পরিকল্পনার অভাব। শুধু সংখ্যা বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেই সংখ্যার সঙ্গে মানানসই অবকাঠামো, পরিবেশ সংরক্ষণ ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা হচ্ছে না। আমরা হয়তো চাঁদে বসতি গড়ার কথা ভাবছি, কিন্তু নিজের গ্রহের সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারছি না।
অতিরিক্ত জনসংখ্যার একটি বড় সমস্যা হলো সম্পদের অসম বণ্টন। সমাজের কিছু মানুষ অভাবের কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। অন্যদিকে কিছু মানুষ অঢেল সম্পদের ভোগবিলাসে মত্ত। এই বৈষম্য সমাজের অস্থিরতা বাড়ায় এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্ম দেয়।
মানুষের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দায়িত্বও বাড়ছে। এমন একটি সমাজ গড়ে তুলতে হবে, যেখানে প্রত্যেক মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ হবে এবং প্রত্যেক মানুষ সমান অধিকার পাবে। সরকারের উচিত জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং পরিবেশবান্ধব নীতি প্রণয়ন করা। পরিবার পরিকল্পনা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নতির মাধ্যমে আমরা এ সমস্যা সমাধানে কিছুটা হলেও এগিয়ে যেতে পারি।
সুতরাং মানুষের চিন্তা, মনুষ্যত্ব ও সহনশীলতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। আমরা যদি নিজেদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সচেতন না হই, তবে এই পৃথিবী একদিন মানবসমাজের জন্য বাসযোগ্য থাকবে না। এখনই সময় সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি সুস্থ ও সুন্দর পৃথিবীতে বাস করতে পারে।
দুপচাঁচিয়া, বগুড়া