আমার সুপারহিরো

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

একদিন হেডস্যারের সঙ্গে একজন অল্প বয়সী লোক আমাদের ক্লাসে আসেন। হেডস্যার সবার সঙ্গে তাঁর পরিচয় করিয়ে দিলেন। ইসমাঈল জবীউল্লাহ মুরাদ নামের লোকটি হেডস্যারের সাবেক ছাত্র। পরিচয় শেষে তিনি আমাদের ইংরেজি বিষয় পড়ালেন। সবাই মন্ত্রমুগ্ধের মতো ক্লাস করলাম। এরপর গণিত পড়ালেন।

পুরো ক্লাসে পিনপতন নীরবতা। তাঁর অঙ্ক শেখানোর কৌশলে মুগ্ধ হই। ক্লাসে মাঝেমধ্যে স্যার কিছু জিজ্ঞেস করলে আমিই সবার আগে উত্তর দিতাম। ক্লাস শেষে সবাই একে অন্যের সঙ্গে স্যারের পাঠদান নিয়ে বলাবলি করছিলাম। কিছুক্ষণ পর হেডস্যার ক্লাসে এসে আমাদের নতুন স্যার সম্পর্কে জানতে চাইলেন। প্রত্যাশিত উত্তর পেয়ে স্যার খুব খুশি।

একদিন মুরাদ স্যারকে বাবার সঙ্গে বসে গল্প করতে দেখলাম। স্যার চলে যাওয়ার পর ভয়ে ভয়ে বাবার কাছে এসে দাঁড়িয়ে থাকি। বাবা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললেন, ‘তোমার বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছিল।’
‘কী বলেছেন?’
‘বলেছেন মনোযোগ দিয়ে পড়ালেখা করলে তুমি জীবনে অনেক বড় হতে পারবে।’

আমি মনে মনে খুব খুশি হলাম। এ কয়েক দিন মনের মধ্যে পুষে রাখা আবদার বাবার কাছে সাহস করে বলে ফেললাম। বাবাও আবদার মেনে নিয়ে স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়ার সুযোগ করে দিলেন।

স্যারকে পেয়ে পড়াশোনায় মনোযোগ আরও বেড়ে গেল। ফলাফল আরও ভালো হতে লাগল। লেখাপড়ার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও স্যারের পদচারণ ছিল ঈর্ষণীয়। আমিও স্যারকে অনুসরণ করি। স্বপ্ন দেখার পরিধি বেড়ে যায়। এসএসসি, এইচএসসি, বিএসসি অনার্স, মাস্টার্সের গণ্ডি পেরিয়ে ভালো একটি চাকরি করি এখন।

স্যারের শেখানো মহামূল্যবান শিক্ষাই আজ আমাকে এত দূর নিয়ে এসেছে। তিনি আমার কাছে সুপারহিরো।

শিক্ষক, জেলা প্রশাসন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নোয়াখালী