স্মৃতির পাতায় আমার মুক্তি আলোয় আলোয়

২০২০ সালের জাতীয় বন্ধু সমাবেশে বন্ধুরাছবি: লেখকের সৌজন্যে

কিছু চাওয়া-পাওয়ার মিশেল, আর সেটিকে ঘিরে আনন্দ, বেদনা, সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেওয়া। আড্ডা, ভালো লাগা-খারাপ লাগার মধ্যেই ফুটে ওঠে বন্ধুত্বের বন্ধন। তেমনই এক বন্ধনের নাম বন্ধুসভা।

বন্ধুসভা বা বন্ধু সমাবেশ—এই নামের সঙ্গে হাজারো মায়া মিশে আছে। যেমনটা থাকে নিজের পরিবার–পরিজনের জন্য। বাংলাদেশের বুকে সবচেয়ে বড় পরিবারের নাম বন্ধুসভা। পরিবারে যেমন থাকে অভিভাবক, তেমনই বন্ধুসভারও রয়েছে কিছু অভিভাবক।

২০২০ সালের বন্ধু সমাবেশে দেখা মিলেছিল বন্ধুত্বপূর্ণ, প্রাণবন্ত এবং চমৎকার আড্ডাপ্রিয় একদল অভিভাবকের। যাঁদের ভালোবাসা ও মায়ায় আবদ্ধ ১২৫টি বন্ধুসভার সব বন্ধু।

সত্যিই অভিভূত ও প্রাণবন্ত তাঁদের সঙ্গে এ সম্পর্ক। আড্ডা, গান, কবিতা, গল্পে পার হয় জীবনের সেরা দুটি দিন। সমাবেশ মাত্র দুই দিনের; কিন্তু স্মৃতিগুলো আজও লিখে শেষ করার মতো নয়। মনে পড়ে সেই দিনগুলোর কথা। কতই না হাসি-আনন্দ আর আড্ডায় কেটেছিল দুটো দিন।

সমাবেশের আগের দিন সন্ধ্যায় গাজীপুর মৌচাক স্কাউট মাঠে পা রাখার পরে আমার ধারণা ভুল প্রমাণ করে দিল সারা দেশ থেকে আগত অসংখ্য বন্ধু। সবার মধ্যেই অন্যকে আপন করে নেওয়ার অন্যরকম এক শক্তি আছে। মনে হলো, একে অপরের সঙ্গে যেন যুগ যুগ ধরে চেনা-পরিচয়। অথচ সেদিনই প্রথম পরিচয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বন্ধুদের সঙ্গে কানামাছি ও হাড়িভাঙা খেলে ক্ষণিকের জন্য শৈশবে ফিরে যাই। অন্যরকম এক অনুভূতি। এত বছর পরেও এখনো সেই বন্ধুদের সঙ্গে কথা হয়।

জাতীয় বন্ধু সমাবেশে অংশ নেওয়া প্রতিটি বন্ধুসভা একটি করে দেয়ালিকা তৈরি করে নিয়ে আসে। সেগুলো সমাবেশ প্রাঙ্গণে প্রদর্শিত হয়
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

সমাবেশে বিস্ময় জাগানিয়া আরেকটি জিনিস ছিল দেয়ালিকা। ১২৫টি বন্ধুসভার ১২৫টি দেয়ালিকার নকশা ও সম্পাদকদের ধন্যবাদ জানাই; বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য এত সুন্দর করে তুলে ধরার জন্য। এত এত লেখা দেখে মনে হলো বাংলাদেশের সঙ্গে নতুন করে পরিচয় হচ্ছি।

সমাবেশের প্রথম পর্বে প্রিয় লেখক আনিসুল হক স্যারের হাতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। তারকাদের উপস্থিতি মন ছুঁয়ে গেছে। সংগীতশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নী, তপন চৌধুরী, কনা ও ইমরানের গানগুলো এখনো হৃদয়ে লেগে আছে। পাশাপাশি প্রতিটি বন্ধুসভার একটি করে পরিবেশনা ছিল। হয়েছে হইহুল্লোর, নাচ ও গান। আরেকজন মানুষের কথা বলতেই হয়; যাঁর বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ ও আপন করে নেওয়ার শক্তি বন্ধুরা মনে রাখবে। তিনি হলেন প্রিয় লেখক ও চিকিৎসক ফারহানা মোবিন।

সমাবেশের দ্বিতীয় পর্বে প্রধান আকর্ষণ ছিল বাংলাদেশের বিখ্যাত অভিনেত্রী জয়া আহসান। শোনান তাঁর স্বপ্নজয়ের গল্প। সঙ্গে ছিলেন বন্ধুসভার তৎকালীন সভাপতি প্রিয় লেখক দন্ত্যস রওশন। যিনি সব বন্ধুকে এক মিনিট চোখ বন্ধ করে মা এবং মাতৃভূমিকে নিয়ে ভাবতে শিখিয়েছে। সত্যিই তখন চোখের সামনে বেশে উঠেছিল মা ও আমার দেশ।

নিজেকে নিয়েও গর্ব হয়, বন্ধুসভার মতো এত বিশাল সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে কাজ করতে পারছি বলে। বিশ্বাস করি, আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’ স্লোগান ধারণ করে বিশুদ্ধ বন্ধুত্বের মাধ্যমে সবুজে অভায়ারণ্য, মাদকমুক্ত, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে পারব।

কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, করোনা মহামারির পর থেকে বন্ধুসভার সদস্যরা ‘বন্ধু সমাবেশ’ নামক হৃদয়ের আনন্দের খোরাকটুকু অনেক মিস করছে। আমরা চাই আবারও বন্ধু সমাবেশ হোক।

সহসভাপতি, কুমিল্লা বন্ধুসভা