মিনি সুইজারল্যান্ডের সবুজ গালিচায়

মিনি সুইজারল্যান্ডের বিস্ময়কর প্রকৃতিতে সবাই
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

একজন মানুষ যত সুন্দর কল্পনা করতে পারে, কাশ্মীরের সুইজারল্যান্ড যেতে চারপাশের দৃশ্য এর চেয়েও বেশি সুন্দর। আমাদের ঘোড়ারা পাকা রাস্তা, মাটি ও পাথরের রাস্তা পেরিয়ে এখন শুধু পাথর ও পাইন–ট্রির ভেতর দিয়ে পাহাড়ের ওপর উঠছে। কোথাও কোথাও এত খাড়া, যেন ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে যাওয়ার অবস্থা। সদস্যদের অনেকে ভয়ে চিৎকার করছে। কোনো উপায় নেই। উপায় একটাই, মনে সাহস নিয়ে শক্ত হয়ে ঘোড়ার পিঠে বসে থাকা। কোনো সন্দেহ নেই, খুব যত্নের সঙ্গে সবাই সেটা করছে। এমন নানা চড়াই-উতরাই পার হয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা হর্স রাইডের পর একসময় মিনি সুইজারল্যান্ডে পৌঁছালাম।

আরও পড়ুন

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় সাড়ে সাত হাজার ফুট ওপরে এই সুইজারল্যান্ড। উঁচু পাহাড়ের ওপর কয়েকটা ফুটবল মাঠের মতো বিশাল ফাঁকা সমতল ভূমি। পুরো জায়গাজুড়ে যেন ঘন ঘাসের চাদর। যেন এক দীর্ঘ সবুজ গালিচা। এত উঁচু পাহাড়ের ওপর থেকে আকাশ দেখা, দূরের পাহাড় দেখা, পাহাড়ের চূড়ায় সাদা বরফ জমে থাকতে দেখা, বিকেলের স্নিগ্ধ আলোয় আরও সুন্দর হয়ে ওঠে এই প্রকৃতি। এখানে হিন্দি ছবির শুটিং হয়। অনেকে একে শুটিং স্পটও বলে। এমন দৃশ্য দেখতে পাওয়া অনেক বড় ব্যাপার। মনে পড়ে যায় ছোটবেলায় শোনা শিল্পী রুমানা ইসলামের গানের কথা, ‘হায়রে আমার মন মাতানো দেশ...রূপ দেখে তোর কেন আমার নয়ন ভরে না…’। আসলেই তাই, এই সুইজারল্যান্ড যত দেখি পরান জুড়াবে না।

মিনি সুইজারল্যান্ড
এতক্ষণ যে সুইজারল্যান্ডের কথা বলা হলো, সেটা আসলে পেহেলগামের একটি সুন্দর দর্শন জায়গা। এ জায়গাটির স্থানীয় নাম বাইসারণ। পাহাড়ের ওপরে এই সমতল ভূমি। পুরোটাই সবুজ ঘাসের চাদর। আকাশছোঁয়া পাইন-ট্রি। দূরে পাহাড়ের ওপর জমে থাকা বরফ—সব মিলিয়ে এ জায়গার এক স্বর্গীয় সৌন্দর্য আছে। একমাত্র সুইজারল্যান্ডে নাকি এমন দৃশ্য দেখা যায়। অপূর্ব সৌন্দর্যের জন্য জায়গাটির নাম মিনি সুইজারল্যান্ড। পেহেলগামে কয়েকটি অসাধারণ দর্শনীয় জায়গা রয়েছে। এরই একটি হলো মিনি সুইজারল্যান্ড।

মিনি সুইজারল্যান্ডে দাঁড়িয়ে প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্য দেখা। স্ত্রীর সঙ্গে লেখক
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

কাশ্মীরি ভাষায় নাগ মানে ঝরনা। আর অনন্ত মানে অনেক। পেহেলগাম হলো কাশ্মীরের অনন্ত নাগ জেলার একটি সুন্দর জায়গা। এখানে একের পর এক মুগ্ধ হওয়ার মতো ঝরনা দেখা যায়। পেহেলগামের অনেক কিছু দেখা হলো, আবার অনেক কিছু দেখা হলো না। জীবনানন্দ দাশের কবিতার মতো, ‘সব পাখি ঘরে আসে—সব নদী—ফুরায় এ-জীবনের সব লেনদেন...’। তাই একসময় ঘরে ফিরতে হয়। জীবনের লেনদেন শেষ হয়। মিনি সুইজারল্যান্ড থেকে ফিরতে ফিরতে প্রায় বিকেল হলো। তাড়াতাড়ি লাগেজ গুছিয়ে গাড়িতে আবার কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরের পথে।

চলবে…