অনুপ্রেরণার বাতিঘর

ছবি: এআই

কলেজের পাট চুকিয়ে গ্রাম ছাড়া হয়ে শহরের একটা মেসে উঠে শুরু করি অনিশ্চিত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি। শুরু থেকে চলতে থাকে প্রাণপণ চেষ্টা। পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে প্রচণ্ড বেগ পেতে হলো। সপ্তাহ দুয়েক পর মেসের নিরামিষ খাবার আর অযত্নের কারণে মাকে ভীষণ মিস করতে শুরু করি। মাথায় শুধু ঘুরপাক খেতে থাকে শেষ দৃশ্যটি। বাড়ি ছাড়ার দিন মা কেমন কান্না করতে করতে আমাকে বিদায় দিয়েছিলেন।

ধীরে ধীরে পড়াশোনার চাপ আর বাড়ির প্রতি মায়ার বেড়াজালে আটকে পড়ি। সর্বক্ষণ মনের কোণে উঁকি দিতে থাকে হতাশা। লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর ভিড়ে হারিয়ে যাওয়ার সংশয়ে ডুবে থাকতাম সারাক্ষণ। মা যখনই ফোন করতেন, তাঁর ভেজা গলার কাতর স্বর আমার হৃদয়শূন্যে আছড়ে পড়ত। ‘বাবা, যে উদ্দেশ্যে আমার বুক খালি করে শহরে গিয়েছিস, সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য দোয়া করি সব সময়।’ মায়ের এই জায়গায় আমি ঋণী হয়ে গেলাম। ঋণ শোধের নেশায় মত্ত হয়ে টেবিলের সামনে নোটে বড় অক্ষরে ‘মাদার’ লিখে রাখলাম। যখনই লেখাটি চোখে পড়ত টেবিলে বসে পড়তাম তড়িঘড়ি করে।

মায়ের মলিন মুখ আর সদয় নয়নের কথা মনে পড়লে ঝরে পড়ত আমার অবাধ্য চোখের জল। বইয়ের বোবা শব্দগুলো তাকিয়ে থাকত প্রত্যক্ষদর্শী হয়ে। কখনো সহ্যের বাঁধ ভেঙে গেলে ওয়াশরুমে চোখের বৃষ্টি ঝরিয়ে মুখ ধুয়ে আবার পড়তে বসতাম। এভাবে একদিন ভর্তির সুযোগ পেলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।

প্রতিকূলে বুক ঠুকরিয়ে পেলিকান পাখি যেমন রক্ত জলে বাচ্চাদের তৃষ্ণা মেটায়, তেমনি সংসারে আমার মা–ও আমাদের আগলে রেখেছেন পরম মমতায়। দুঃখ-দুর্দশায় ঋজু ভঙ্গিতে দাঁড়িয়েছেন মনোবলের সঙ্গে। মা আমার অনুপ্রেরণার বাতিঘর, যেখান থেকে তীব্র আলোর ঝলক এসে আমার জীবনকে আলোকিত করেছে।

বন্ধু, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা