বর্ষণমুখর আষাঢ়ের বিকেল

বর্ষণমুখর আষাঢ়ের বিকেল
ছবি: লেখক

আষাঢ়ের তর্জন-গর্জন আর ঝুম বর্ষণ। বৃষ্টির শব্দে টিনের চালে এমন সুরসংগীতের সৃষ্টি হয়, যা কোনো বাদ্যযন্ত্রে পাওয়া যাবে না। খুব শান্ত মনে কান পেতে শুনছি বর্ষণের শব্দ। টিনের চাল থেকে মাটিতে সোজা পড়ছে স্বচ্ছ জলধারা। হাত বাড়িয়ে ছুঁতে গিয়ে দেখি যেন স্বর্গীয় জল! কত শান্ত, কত শীতল।

গাছের সবুজ পাতাগুলো আরও তীব্র সবুজ বর্ণ ধারণ করেছে। সবুজ পাতাগুলোর ভরা যৌবন চলছে। বৃষ্টির ফোঁটা আর বাতাসে সেটিরই যেন জানান দিচ্ছে।

বৃষ্টি সব উষ্ণতা নিমেষেই কমিয়ে এনে দিল শান্তির ধারা। আকাশে গুড়ুম গুড়ুম ডাক, বৃষ্টি পড়তে পড়তে আবার কমে আসা। ততক্ষণে ভেসে গেছে সব; বৃষ্টির শব্দ ভেদ করেই এল আজানের ধ্বনি। প্রকৃতির এ সৌন্দর্য দেখার ঘোর কাটাল স্রষ্টার অমৃত বাণী।

এমন একটা বৃষ্টি দেখার পিপাসা কতকালের! মাটির ঘরের বারান্দা; টিনের চালে বৃষ্টি পড়ার শব্দ। মুরগির ছানাদের মায়ের ডানার ভেতর লেপ্টে যাওয়া। আবার কোনোক্রমে মাথা বের করে থাকা। নতুন প্রাণেরাও দেখছে প্রকৃতির লীলাখেলা।

বৃষ্টি থামার পর তাকিয়ে দেখি, রক্তরঙা রঙ্গন তাকিয়ে আছে ডাগর ডাগর চোখে। পেঁপে গাছের পাতা থেকে স্বচ্ছ জল ফোঁটায় ফোঁটায় ঝড়ছে। পিচঢালা পথ ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গেছে। যেদিকে তাকাই দৃষ্টি জুড়ায়।

দিনভর–রাতভর হয়তো তারা ঝড়বে; কারও মনখারাপের দিনে সঙ্গ দেবে, আবার আনন্দলোকে নিয়ে যাবে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়—
‘ব্যাকুল বেগে আজি বহে বায়,
বিজলি থেকে থেকে চমকায়।
যে কথা এ জীবনে রহিয়া গেল মনে
সে কথা আজি যেন বলা যায়
এমন ঘনঘোর বর্ষায়।।’

কার্যকরী সদস্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা