মনদোলানো কৃষ্ণচূড়া

কৃষ্ণচূড়া দূর থেকে স্বাগত জানায় পথিককে। মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে তোলাছবি: প্রথম আলো

গ্রীষ্মের খরতাপে ধরা যখন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, তখন প্রকৃতিকে রাঙিয়ে দিতে একটু শীতলতার ছোঁয়া নিয়ে হাজির হয় কৃষ্ণচূড়া। ঘন সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে লাল টুকটুকে কৃষ্ণচূড়া দুলে ওঠে প্রকৃতির আহ্বানে। ঝাঁজাল রোদের উষ্ণতা ভেদ করে পথিকের চোখ আটকে যায় কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে। লাল–হলুদ, লাল–কমলা রঙের ফুলগুলো অবর্ণনীয় রূপে মেলে ধরে নিজেদের।

এমন কোনো মানুষ নেই যে এই রূপের কাছে আটকে যায় না, একটু চোখ তুলে তাকায় না। একবার হলেও চোখ তুলে দেখে। হৃদয়ে এক অনাবিল তৃপ্তি পেতে চায়। ফুল মনকে আন্দোলিত করে বরাবরই। জাগরিত করে ভালোলাগার জগতকে।

কৃষ্ণচূড়া বাংলাদেশের খুব পরিচিত একটি ফুল। শহর-বন্দর, নগর, গ্রাম—সব জায়গায় দেখা মেলে এই ফুল গাছের। উচ্চতায় ১০ থেকে ১২ মিটার পর্যন্ত উঁচু হলেও ডালপালার বিস্তৃতি অনেক। চারপাশে ডালপালা শাখা-প্রশাখার বিস্তারে বেশ ঝোপালো হয় ও অনেকটা অঞ্চলজুড়ে এর ব্যাপ্তি থাকে। এই গাছ যথেষ্ট ছায়া দিতে পারে। পাতাগুলোও অনেক সুন্দর। গাঢ় সবুজ চিরল চিরল পাতা, ফুলদণ্ড লম্বা। একসঙ্গে অনেক ফুল ফোটে। লাল, কমলা ও হলুদ রঙের ফুলগুলো এতই বেশি ফোটে যে দূর থেকে মনে হয় যেন কোথাও আগুন লেগেছে!

বসন্ত থেকে ফুল ফোটা শুরু হয় গ্রীষ্মকাল পর্যন্ত থাকে। কোথাও কোথাও শীতের শেষদিকে ফুল ফুটতে শুরু করে। ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়ি যুক্ত। পাপড়িগুলো প্রায় ৮ সেন্টিমিটারের মতো লম্বা হতে পারে। চমৎকার কারুকাজে সজ্জিত প্রতিটি পাতা ৩০-৫০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২০-৪০টি উপপত্র বিশিষ্ট। ফুল আর পাতা মিলে খুব দৃষ্টিনন্দন হয়ে থাকে কৃষ্ণচূড়া।

বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সব অঞ্চলে এ বৃক্ষটি জন্মায়। বৃক্ষটি শুধু যে সৌন্দর্যবর্ধক, তা নয়, এটি উষ্ণ আবহাওয়ায় ছায়া দিতেও বিশেষভাবে উপযুক্ত। শুষ্ক অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে গেলেও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এটি চিরসবুজ। কৃষ্ণচূড়া বৃক্ষটি উষ্ণ বা প্রায়-উষ্ণ আবহাওয়ায় জন্মায়। এই বৃক্ষ শুষ্ক ও লবণাক্ত অবস্থাও সহ্য করতে পারে। মজার বিষয় হলো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে এই ফুল ফোটে। যেমন বাংলাদেশে মাঘ মাসের শেষ বা ফাগুনের শুরু থেকে ফুল ফুটতে শুরু করে। ভারতবর্ষে সাধারণত ফাগুন-চৈত্র মাসে ফুল ফোটে। বাংলাদেশ, ভারত, ক্যারিবিয়ান অঞ্চল, আফ্রিকা, হংকং, তাইওয়ান, দক্ষিণ চীনসহ বিশ্বের অনেক দেশে বৃক্ষটি জন্মে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ফ্লোরিডা, দক্ষিণ পশ্চিম ফ্লোরিডা, টেক্সাসের রিও গ্রান্ড উপত্যকায় পাওয়া যায়। দৃষ্টিনন্দন এই ছায়া বৃক্ষটির বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিক্স রেজিয়া (Delonix regia)। এটি ফ্যাবেসি (Fabaceae) পরিবারের অন্তর্গত। ফাগুনে ফোটা আগুনলাল এই কৃষ্ণচূড়া গুলমোহর নামেও পরিচিত।

ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ