ছুটির দিনে চাঁদপুর

নদীর পাড়ে বসে এমন মনোরম দৃশ্য দেখা যায়। বড় স্টেশন, চাঁদপুর
ছবি: নাজনীন আখতার

রাজধানী শহর থেকে নদীপথে মাত্র তিন ঘণ্টার দূরত্ব। নদীর দুই পাশের মনোরম সৌন্দর্যে কিছুটা সময়ের জন্য হলেও আপনি মুগ্ধ হবেন। আর যাঁরা নৌযানে চলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, তাঁদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে ধরা দেবে যাত্রা। বলছিলাম ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরের কথা। দেশের রাজধানী যদি ঢাকা হয়, তবে ইলিশের রাজধানী চাঁদপুর।

চারদিকে নদীবেষ্টিত শহরটিকে আগলে রেখেছে তিনটি নদী। ইতিহাস, ঐতিহ্য আর সম্ভাবনার শহর চাঁদপুর তাই তো কেবল নামেই নয়, গুণেও মুগ্ধতার আঁচড় কাটে।
জাদুর শহর যেমন ঢাকা, তেমনি আবার মন খারাপের শহরও ঢাকা। এখানে যেমন সুখ আছে, আবার অসুখও মনের মাঝে ঘুরপাক খায় প্রতিনিয়ত। ইট-পাথরের এ শহরে দম আটকে এলে আর ছুটির দিনটিকে কাজে লাগাতে চাইলে স্বল্প সময়ের দূরত্বের যাত্রা হিসেবে আপনি চাঁদপুরকে বেছে নিতে পারেন।

কেন লঞ্চে আসবেন চাঁদপুর

নদীপথে মাত্র ৬৫ কিলোমিটার দূরত্ব। বুড়িগঙ্গা থেকে যাত্রা শুরু করে ধলেশ্বরী হয়ে পদ্মা-মেঘনা পাড়ি দিয়ে পৌঁছাতে হয় চাঁদপুর। দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ভ্রমণ ঢাকা-চাঁদপুর রুট। দোতলা, তিনতলা লঞ্চগুলো যেন একেকটা রাজপ্রাসাদ। বাহারি ডিজাইনের লঞ্চগুলোতে চাকচিক্যে ভরপুর। আপনি লঞ্চে উঠেই কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে যাবেন। আরামদায়ক ভ্রমণে প্রথম পছন্দও এটি। ডেক- প্রথম শ্রেণি কিংবা কেবিন যেমন ইচ্ছা আপনি তেমন করেই চড়তে পারেন। নদীর সঙ্গে যে এ দেশের মানুষের গভীর মিতালি, তা স্বচক্ষে দেখতে পাবেন।

সড়কে গেলে কী হয়

একসময় চাঁদপুর থেকে ঢাকা আসতে সময় লাগত সাত থেকে আট ঘণ্টা। মিনিট থেকে ঘণ্টা, তারপর যেন ঘড়ি চলে কিন্তু চাকা চলে না, এমন জ্যামে অতিষ্ঠ হতো মানুষ। অবশ্য সেদিন আর নেই। ঢাকা থেকে চাঁদপুর যেতে এখন আর সড়কপথে তেমন অসুবিধা পোহাতে হয় না। একটু বুদ্ধি করে যেতে পারলে আড়াই ঘণ্টায় চাঁদপুর পৌঁছাতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ঢাকার গুলিস্তান থেকে আপনি বিআরটিসি কিংবা অন্য কোনো গাড়িতে প্রথমে আসতে হবে দাউদকান্দি। সেখান থেকে শ্রীরায়ের চর দিয়ে মতলব সেতু ধরে চাঁদপুরে পৌঁছাতে পারেন অনায়াসে।

চাঁদপুর লঞ্চঘাটে যাত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে ঢাকাগামী একটি লঞ্চ
ছবি: প্রথম আলো

রেলগাড়িতে আসা যায় না?

রেলগাড়ি ঝমাঝম পা পিছলে আলুর দম। হা হা হা আসলেই তো। রেলগাড়িতে চড়ে কি ঢাকা থেকে ইলিশের বাড়ি আসা যায় না? অবশ্যই আসা যায়। তবে সেটা আসতে গেলে বেশ ঝক্কিঝামেলা পার হতে হবে। কিন্তু আপনি যদি আবার চট্টলা মানে চট্টগ্রাম থেকে আসেন তবে আরামে আসতে পারবেন ট্রেন বা রেলগাড়িতে চড়ে। নিরাপদ ভ্রমণে তাই ট্রেনের জুড়ি নেই।

চাঁদপুরে কী আছে?

ইলিশের বাড়িখ্যাত চাঁদপুর ইলিশের জন্য বিখ্যাত। এখানকার পর্যটনকেন্দ্রগুলোও দেখার মতো। নদীবেষ্টিত জেলা হওয়ায় নদীপাড়ের হাওয়া খেতে ছুটে যেতে হবে বড় স্টেশন মোলহেডে। যেখানে দেখা মিলবে তিন নদীর মোহনা। পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া মিশেছে এক হয়ে। বড় স্টেশনে রয়েছে দেশের বৃহত্তম ইলিশের আড়ত। পাইকারি-খুচরা ইলিশ কিনতে পারবেন। ভোজনরসিক বাঙালির রসগোল্লার স্বাদ নিতে যেতে হবে ফরিদগঞ্জে। সেখানে মিলবে আউয়ালের রসগোল্লা। মতলবের সুস্বাদু ক্ষীর, যা একবার খেলে বারবার খেতে মন চাইবে।

এ ছাড়া আটটি উপজেলায় রয়েছে বেশ কিছু নিদর্শন। যেমন রূপসা জমিদারবাড়ি, লোহাগড় মঠ, কড়ৈতলী জমিদারবাড়ি, হরিপুর জমিদারবাড়ি। হাজিগঞ্জ বড় মসজিদ অন্যতম ধর্মীয় স্থাপত্যশৈলী।

চাঁদপুর শহরের প্রবেশদ্বারে সুসজ্জিত ইলিশ চত্বর। বিশাল আকারের এই ইলিশ সবাইকে স্বাগত জানায় তার নিজের রাজ্যে।

আতিথেয়তা কেমন চাঁদপুরের মানুষের

চাঁদপুরের মানুষ নাকি চাঁদমুখ। লোকমুখে এমনটাই শোনা যায়। চাঁদমুখের মানুষের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হবেন না, এটাও কি কল্পনা করা যায়। হ্যাঁ, ঠিক তাই। চাঁদপুরের মানুষ আপনাকে আতিথেয়তায় মুগ্ধ করে দেবে। এখানকার বিশুদ্ধ খাবার আর মানুষের হাসিমুখ দেখে আপনাকে মুগ্ধ হতেই হবে।

ভ্রমণের জন্য চাঁদপুরকে কেন পছন্দের তালিকায় রাখবেন

কম সময়ে যাঁরা ঘুরতে পছন্দ করেন, তাঁদের কাছে চাঁদপুর পছন্দের তালিকায় শীর্ষে। কেননা, লঞ্চে করে এক চমৎকার ভ্রমণ উপভোগ করতে যাচ্ছেন আপনি। নদীর দুই পাশের প্রকৃতি হৃদয় নাড়িয়ে দিয়ে যায়। তাই দেরি না করে ছুটির দিন ঘুরে আসুন চাঁদপুর।

সভাপতি, চাঁদপুর বন্ধুসভা