আব্বু, তুমি পারোও!

আব্বু, তুমি পারোও!ছবি: সংগৃহীত

তখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি। ঢাকার টেকনিক্যাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে ওঠি। আব্বু আমাকে প্রায়ই এগিয়ে দিতেন। ভিড় দেখলে গাবতলী পর্যন্ত সঙ্গে যেতেন। একদিন দেরি হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস মিস করে ফেলি। বাসে তুলে দিতে তিনি আমাকে গাবতলী নিয়ে গেলেন।

আব্বু সব সময় আমার পাশের সিটে বসতেন। কোনো মহিলা যাত্রী দেখলে আবার ওঠে যেতেন। তবে বাস থেকে নামতেন না। গাবতলী পর্যন্ত এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে দোয়া পরতেন। কী যে করতেন আব্বু! আমার খুব অস্বস্তি লাগত। তাঁকে বলতাম, ‘এখন যাও। বাসায় ফিরে যাও। শুনতোই না।’

এমনই একদিন বলল, ‘কী কিনে দেব, বল?’ কখনো চিপস, কোমল পানীয় কিংবা বিস্কুট কিনে দিতেন। সেদিন বললাম, ‘এক প্যাকেট এনার্জি বিস্কুট।’

আব্বু বাস থেকে নেমে রাস্তার অন্য পাশে গেলেন কিনে আনতে। কিন্তু দেরি করায় বাস ছেড়ে দিল।

আমার তো খুব মন খারাপ। তখন মুঠোফোনের তেমন প্রচলন না থাকায় কল দিয়ে জানাতেও পারিনি।

আমি থাকতাম প্রীতিলতা হলে। ক্লাসে যাওয়ার আগে হলে গেলাম ব্যাগ রাখতে। ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর শুনি হলের খালা ডাকছেন। বললেন, ঢাকা থেকে আপনার একজন মেহমান আসছেন। ভাবলাম, এই মুহূর্তে ঢাকা থেকে আবার কে এল? হলের গেস্টরুমে গিয়ে চমকে গেলাম!

দেখি, আব্বু বসে আছেন। হাতে এক প্যাকেট এনার্জি বিস্কুট! ‘আব্বু, তুমি পারোও! এটা দিতে সাভার চলে আসছ! আমি তো এখানেও কিনতে পারতাম।’ জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলাম। বললাম, ‘তোমার না বিদ্যুৎ বিল দিতে যাওয়ার কথা? আম্মা শুনলে কিন্তু রাগ করবে। তাড়াতাড়ি যাও।’

বাবারা বুঝি এমনই হয়। সন্তানের সুখের জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে মুহূর্তও ভাবেন না। আজ সারা দিন আব্বুকে মনে পড়ছে। তাঁর ভালোবাসা মিস করি খুব।

মিরপুর, ঢাকা