ঝড়ের কবল থেকে উঠে আসা এক অগ্নিসূর্যের নাম তুমি। তোমার হাতের অগ্নিবীণা আজও বাজে রক্তের সুরে, বিদ্রোহের তান দিয়ে, যেন মৃত্যুক্ষুধার রাত ভেঙে এক লালিমা ফুটে ওঠে আকাশের গায়। ‘চল্ চল্ চল্’, শিকলভাঙা সেই পদধ্বনি এখনো মাটির গর্ভে কাঁপে, উত্তাল নদীর মতো আছড়ে পড়ে কামাল পাশার প্রাসাদে, ভেঙে দেয় দাসত্বের প্রাচীর।
তোমার শব্দেরা আজও বুনে যায় লাল কারুকার্য। ধূমকেতুর পথে ছড়ানো সেই অক্ষরগুলো জ্বলে—মাটির গহ্বরে, রিক্তের বেদনায় ভেজা কৃষকের ঘামে, কিষানের কণ্ঠে ফসলের গানে। ‘আমি চির উন্নত শির’—এই মন্ত্রে উড়িয়ে দাও ভিক্ষার থালা, মুষ্টিবদ্ধ হাতের তালে তালে গড়ে ওঠে নতুন সকাল।
মসজিদের মিনার থেকে নেমে আসে তোমার বিদ্রোহের মন্ত্র, কষ্টিপাথরে খোদাই করা নারী নামের জ্যোৎস্না। খেয়াপারের তরি আজও ভাসে—কালো জলের বুকে আলোর সেতু বেঁধে, যাত্রীদের কানে কানে বলে: ‘জাগো অন্ধ, জাগো!’ পদ্মা আর মেঘনার জলে প্রতিধ্বনি তোলে তোমার যৌবন, অগ্নিগর্ভ সেই হৃদয়ে প্লাবন আসে লাল সূর্যাস্তের।
তোমার কবিতার বুকে শিখা জ্বলে—পথ হারানো মানুষদের হাতুড়ি-কাস্তে। কান্ডারি ডাক দেন: ‘হুঁশিয়ার!’—ভেঙে ফেলো গোলামির বেঁড়ি, শব্দের তলোয়ারে কাটো শৃঙ্খল। দোলনচাঁপার গন্ধে মেশে বিদ্রোহের প্রেম, শাত-ইল-আরবের বালিয়াড়িতে লেখা হয় মুক্তির ইশতেহার।
তুমি বলেছিলে: ‘মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান!’ আজও সেই বাণী পাথর ভাঙে, জমিনে জমিনে গজায় লাল গোলাপ। তোমার কবিতার পাতাজুড়ে সিন্ধু-হিন্দোলা ওঠানামা করে—ভাষার নদীতে মিশে যায় হাজার বছরের যন্ত্রণা, হাজার বছরের স্বপ্ন।
তবু তুমি শান্ত, যেন বিদ্রোহী নামের এক নিঃশব্দ প্রহরী। সময়ের খাতায় লেখা তোমার নাম—অগ্ন্যুৎপাতের অক্ষরে, মাটির গান হয়ে, মানুষের জয়গাথা হয়ে।
শিক্ষার্থী, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সিলেট