খুব সাধারণভাবেই এসেছিল ৭ এপ্রিল, ২০১০। অন্য আর উনত্রিশটা দিনের মতোই। ঝকঝকে রৌদ্রময়। কিন্ত যাওয়ার সময় এক ঝটকায় নিয়ে গেল আম্মাকে। আমাদের হৃদয়ে চিরস্থায়ী ক্ষত করে দিয়ে গেছে। হারিয়ে ফেললাম জীবনের রশ্মিটাকে।
আমার আম্মা অসাধারণ মানুষ ছিলেন। অসম্ভব পরোপকারী। খুব নিরিবিলি জায়গায় সময় কাটাতে পছন্দ করতেন। অনেক বই পড়তেন। হুমায়ূন, সমরেশ, সুনীলের প্রায় সব বই আম্মার পড়া। প্রতিদিন খবরের কাগজ পড়তেন। চোখের ছানির অপারেশন হয়েছিল। কালো চশমা চোখে। পত্রিকা পড়তে পারছিলেন না। কত পত্রিকা যে বালিশের নিচে জমিয়েছিলেন, পরে পড়বেন ভেবে। আব্বু পাশে বসে শিরোনাম পড়ে শোনাতেন। বইগুলোর পাতায় আম্মাকে খুঁজে পাই।
আম্মার চায়ের নেশা ছিল। কড়া লিকারের ঘন দুধ চা। আমরাও এখন সেই পথে। আমরা একসঙ্গে বসে চা খেতাম। অনেক সুন্দর ছিল জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত।
আম্মা যখন ছিলেন, তখন আমরা যৌথ পরিবারে থাকি। একটা দিনও কাছে এনে রাখতে পারিনি। আসতেন, আবার চলে যেতেন।
অনেক বই পড়তেন। হুমায়ূন, সমরেশ, সুনীলের প্রায় সব বই আম্মার পড়া। প্রতিদিন খবরের কাগজ পড়তেন।
আর এখন চুপচাপ ঘরে শুয়ে-বসে থাকি। হাঁটাহাঁটি করি। আম্মাকে তীব্রভাবে মনে করি। শুধু মনে হয়, ইসস! আম্মা যদি থাকত! একবার যদি পেতাম। পাশে বসে ফর্সা হাতটা ধরে থাকতাম। আর যেতে দিতাম না।
আম্মার অনেক সুন্দর সুন্দর শাড়ি ছিল। শৌখিন ছিলেন। তখন তো আর অনলাইনে কেনাকাটার সুযোগ ছিল না। এখন মনে হয়, আম্মা থাকলে কত শাড়ি পাঠিয়ে দিতাম। সারপ্রাইজ দিতাম ওনাকে।
আম্মাকে যদি আবার ফিরে পেতাম। কত কথা জমে থাকে। আম্মা যা শুধু তোমাকেই বলা যায়, বলতে ইচ্ছে করে। মাঝেমধ্যে মনে হয়, কেউ যখন জীবন থেকে চলে যায়, কেন স্মৃতিগুলো নিয়ে যায় না? নাছোড়বান্দা স্মৃতিগুলো পিছু ছাড়ে না। মনের এ–ঘর থেকে ও–ঘর ঘুরে বেড়ায়।
আম্মা, মনের যে ঘরটা তোমার ছিল, সেটা আজও সিলগালা। কেউ ঢুকবে না সেখানটায়। তোমার জায়গায়টা থাকবে একইরকম, পুরোনো হবে না কোনোদিন।
মিরপুর, ঢাকা