একপশলা বৃষ্টিতে আধভেজা কংক্রিটের ধূসর শহর ঘুমিয়ে পড়েছে। তুমি রাতজাগা পাখি হয়ে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে জ্যোৎস্নাভাঙা রাতের বৃষ্টির ছোঁয়া স্পর্শ করতে ব্যস্ত। ভালোবাসার শেষ ট্রেন ‘সুবর্ণ এক্সপ্রেসের’ অসমাপ্ত গল্পটি লিখতে বসে ১৪ বছর আগে ২২ জুলাই ফিরে যাওয়া। মনের ক্যানভাসে তোমাদের সৌন্দর্যরানি শহরের জলছবি আঁকার চেষ্টা করছি। ফয়’স লেকে আকাশে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমিয়ে পড়ে। শরতের পেঁজা তুলা মেঘের ছেঁড়া পালে মেঘবালক–বালিকারা লুকোচুরি খেলে। বর্ষায় পাহাড়ে সবুজ ঘাসে টুপটাপ ঝরে পড়া বৃষ্টির আলিঙ্গনে তোমার শুভ্র পায়ে নূপুরের রিনিঝিনি শব্দ, চাঁদনিরাতে শব্দ কামারের মতো গল্প বুনে যায়।
তোমাদের গ্রামে রাস্তার পাশে সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছকে ষোড়শী কন্যার মতো লাগছিল। আমরা দুজন যখন মেঠোপথ ধরে হাটছিলাম, তুমি গুনগুন করে আবৃত্তি করলে জীবননান্দের
‘আবার বছর কুড়ি পরে তার সাথে দেখা হয় যদি!
আবার বছর কুড়ি পরে—
হয়তো ধানের ছড়ার পাশে
কার্তিকের মাসে—
তখন সন্ধ্যার কাক ঘরে ফেরে—তখন হলুদ নদী।’
তালগাছের ডালে প্রেমিক বাবুই পাখিরা তাঁদের সঙ্গিনীদের জন্য বাসা বোনায় ব্যস্ত। বিলের ধারে জমে থাকা পানিতে ব্যাঙ ডাকার শব্দ, মাঝে মাঝে ঝিঁঝি পোকার গান, শিয়ালের হুক্কা হুয়া। এভাবে কত সন্ধ্যাপ্রহর কেটেছে আমার মনে নেই। জানো প্রেয়সী! আমাদের শহরে অসময়ের আধভেজা বৃষ্টি নেমেছিল। আমি জানি, বৃষ্টিবেলায় বাড়ির ছাদে নেচে নেচে অসময়ের বৃষ্টিতে ভিজতে খুব পছন্দ করো। বৃষ্টিবেলায় তোমার অধরে জমে থাকা বৃষ্টির ফোঁটাগুলো ছুঁতে ইচ্ছা করে। ইচ্ছা করে তোমার ভেজা চুলের খোঁপায় একগুচ্ছ কদম গুঁজে দিই। আমাদের শহরে বৃষ্টির পরে আকাশে হঠাৎ রংধনু। ইশ! তুমি পাশে থাকলে রংধনুর সাত রং দিয়ে তোমায় রাঙিয়ে দিতাম। দোল উৎসবে যেভাবে তোমায় রাঙিয়ে ছিলাম। রংধনুর রং দিয়ে লেখা গল্পটি মেঘের খামে তোমাকে পাঠানোর অরণ্যে রোদন করছি। তোমার শহরে কি অসময়ে বৃষ্টি নামে? তোমার জানালার পাশে কদমগাছে কি ফুল ফুটেছে? তোমাদের বাড়ির উঠানে পাকুড়গাছে এখনো কি ময়না–শালিক–টিয়া কানাকানি করে। ঝুঁটিওয়ালা বুলবুলি প্রেমিক পাখিটা তার প্রেমিকা পাখিটার ঠোঁটে ঠোঁট রেখে প্রেম নিবেদন করে?
বুলবুলির প্রেম নিবেদনে ডাকটা আজও আমার কানে ভেসে আসে। পাহাড়ি ঝরনা বেয়ে নিচে পাথরে আছড়ে পড়া শব্দের মতো। তন্দ্রাবিলাসে আধো ঘুম আধো জাগরণ অবস্থায় হঠাৎ সাইকেলের বেলের টুংটাং শব্দ। হলুদ পোশাক পরা ডাকহরকরা নারায়ণ এসে বলল, আপনার একটা চিঠি আছে। আধভেজা হলুদ খামের চিঠিটা হাতে নিয়ে তোমার অদৃশ্য ভালোবাসার অনুভব করলাম, ঠিক সে সময় বৃষ্টির ছোঁয়ায় আধভেজা আমি আর আধভেজা তুমি। হঠাৎ তোমার আবছায়া আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল শরতের বৃষ্টিতে। আধভেজা শহরে বৃষ্টিতে আমার হৃদয় আকাশে বৃষ্টিভেজা মূর্তিটি মনের আনন্দে ভিজতে লাগল।
বন্ধু, চট্টগ্রাম বন্ধুসভা