বৃদ্ধাশ্রম থেকে চিঠি
খোকা, আমি বৃদ্ধাশ্রমে এখন খুব ভালো আছি, আমার বয়সী অনেক সহপাঠী আছে। ছোটবেলায় যেমন বন্ধুদের সঙ্গে খেলতাম, গল্প করতাম, ঠিক তেমনি এখানেও আমার দিন বেশ কেটে যায়। চিন্তা করিস না, তুই তোর ছেলেমেয়েদের দিকে একটু খেয়াল রাখিস। এখানে যখন সবাই বলে—আমার ছেলে অমুক, আমার ছেলে তমুক, তখন আমার গর্ব হয়। আমার ছেলেও যে প্রতিষ্ঠিত।
জীবনে বাবার মতো বাবা হবি, আমার মতো অক্ষম বাবা হবি না কখনো। নয়তো বৃদ্ধ বয়সে তোকেও বৃদ্ধাশ্রমে যেতে হবে, তা আমি মোটেও চাই না। এখানে শীতের বেলায় কম্বল দিতে আসে অনেকে। তোর বিদেশি কম্বলের চেয়ে পাতলা হলেও ঘুম হয় আরামে। আবার অনেক সময় প্যাকেটভর্তি ভালো খাবারও পাই। তখন তোর কথা মনে পড়ে।
যখন আমার অফিসে কোনো মিটিংয়ের সময় খাবারের প্যাকেট দিত, সেটা তোর জন্য লুকিয়ে নিয়ে আসতাম। তবে এখন চোখজোড়া ছলছল করে ওঠে, তোকে ফেলে খাবারগুলো একাই খেতে হয়। বিভিন্ন উৎসবে জামাগুলো মনে করে নিস। আমার জন্য চিন্তা করিস না। এখানে প্রতি ঈদ ও পূজায় অনেকে কাপড় দিয়ে যায়। তাতেই আমার পুরো বছর পার হয়ে যায়। তোর ছেলেমেয়েদের একটা আদর্শ পরিবার দিস। যাতে তারা শিখে নেয়, মা–বাবার যত্ন নিতে হয়।
যদি এই বৃদ্ধাশ্রমে আমার মৃত্যু হয় কখনো, কবরটা তোর মায়ের পাশে দিস। তোর হয়তো শুধু একটু জায়গা নষ্ট হবে। তারপরও সেখানে কবর দিস। তোর মায়ের পাশে থাকা হয় না কত কাল। আমিও নিশ্চিন্তে ঘুমাতে চাই অনন্তকাল।
চকরিয়া, কক্সবাজার