গায়ত্রীকে খুঁজতে খুঁজতে

অলংকরণ: আরাফাত করিম

গায়ত্রীকে খুঁজতে খুঁজতে জনারণ্যে কম্পাসের কাঁটা ঘোরে
মস্ত একটা বৃত্তের ভেতরে বৃত্ত, তার ভেতরে বৃত্ত
ঘুরতে ঘুরতে ঘুরতে ঘুরতে
কেন্দ্র থেকে খুঁটি ধরা প্রাণ, আমি তখন বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকে পড়ি
খেজুরের কাঁটা ফুটে পায়ে-পায়ে রক্ত গড়ায়
ভোরের সবুজ ঘাস রাঙিয়ে ওঠে
বর্ণমালার শবব্যবচ্ছেদে ঘুম ভেঙে যায়

গায়ত্রীর নরম ঠোঁট ছোট ডিঙি, শান্ত–স্থির নদীটির পাশে
দিগন্তবিস্তৃত শস্যখেত, কাকতাড়ুয়ার ছেঁড়া জামা ওড়ে
ঝুঁকে পড়া কুমড়োর ফুল, লাবণ্যময়
কলাবউটির মতো
পাখির ছানার মুখে, বীজের চিমটে রস ঢেলে ডানায় সূর্যের রং ঝলসায়
গায়ত্রীকে খুঁজতে খুঁজতে মায়ের আঁচল মনে পড়ে
ল্যাম্প জ্বালানো সন্ধ্যা, নামতা পড়া
ঝিঁঝি পোকার ডাক, ঘোর বর্ষা, ব্যাঙের কোরাস
দূরে, বহু দূরে, দুলতে থাকা তারাটির খোঁজে
দেশের ভেতরে দেশ, মাটির ভেতরে মাটি, প্রাণের ভেতরে প্রাণ, সীমান্ত ডিঙিয়ে যায়

গায়ত্রী, তুমি আমার স্মৃতি, হারানো সত্তা, প্রিয় বাংলাদেশ
গায়ত্রীকে খুঁজতে খুঁজতে আমি পাতালে নেমে আসি
মরে যেতে ইচ্ছে হয়, খুব মরে যেতে, জীবন্ত সলিলে
গায়ত্রীকে খুঁজতে খুঁজতে, কাঁটাতারের শৃঙ্খলে বন্দী হই
মগজে গাণিতিক সংকেত মেশিনগানের মতো ছোটে
কানের ভেতর লাগাতার শন শন শন শব্দ ভেসে আসে

গায়ত্রী তোমাকে জড়িয়ে জড়িয়ে পাক খায়
পাক খেতে খেতে মাটি ফুঁড়ে শরীর ঢুকে যেতে থাকে
রকেট বাজির মতো আকাশ ফুঁড়ে উড়ে যায়
গোটা কাগজের পৃথিবীটাকে ছিঁড়ে কুচি কুচি করতে ইচ্ছে হয়
গায়ত্রী, তোমার জন্য এক পৃথিবী প্রেমের কবিতা লিখব

ভাবতে ভাবতে মুখ দিয়ে গ্যাজলা বেরিয়ে আসে
আমি আর কথা বলতে পারি না
আমি মরতে চেয়েও আর মরে যেতে পারি না
স্থির চোখে, ঝিমিয়ে পড়া সত্তায়, শুধু তাকিয়ে থাকি
ওই বিশাল সমুদ্রের দিকে
ঢেউ কীভাবে পাকিয়ে সেখানে খেলা করে
আর পাথরের বুক ফেটে বেরিয়ে আসে আগুন
হাড়ভাঙা প্রণয়ের গান