বিস্ময়

পাকা বটফল খেতে ব্যস্ত এক জোড়া কোকিল। বালিয়াহালট গোরস্থান, পাবনা সদরছবি: হাসান মাহমুদ

জংলার কোকিলের সঙ্গে সখ্য হয়েছে আমাদের। রোজ বিকেলে কোকিলকে উত্ত্যক্ত করতে হানা দিচ্ছি বাসার পেছনের ছোট্ট জংলায়। কোকিল ডাকে, ডাকার পর আমরাও তাকে অনুসরণ করি। তার স্বরে, সুরে ডাক দিই। সেই ডাকে কোকিলের মন ভরে না। আমাদের ঠিকঠাকভাবে শেখানোর জন্য আবার ডাকে।

প্রথম যেদিন চার বছরের ছোট্ট জারিফকে জংলার কোকিলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই, সেদিন জারিফের চোখে বিস্ময় ছিল অন্তহীন। চোখ চকচক করছিল বেশ বড়সড় আকার নিয়ে। ঠোঁটে অদ্ভুত মিষ্টি হাসি। ওই মুহূর্তে জারিফকে জড়িয়ে ধরে আদর দিয়ে বিরক্ত করার প্রবল ইচ্ছা সংবরণ করে শুধু তার অবাক দুই চোখ দেখলাম। শুধুই দেখলাম। তারপর বিস্ময়ের ঘোর অল্পস্বল্প কাটিয়ে জারিফ বলল, ‘আপু! আবার ডাকো তো একটু’।

জারিফ যখন দৌড়াতে শিখল, কোনো এক বৈশাখের বিকেলে ঝড় আসার বেশ খানিকটা আগে বকপাখিদের বিশাল বড় মিছিল উড়ে যাচ্ছিল মাথার ওপর দিয়ে। আমরা তখন ছাদে মেঘেদের দল দেখতে ব্যস্ত। পাখিদের মিছিল দেখার জন্য ঈঙ্গিত করতেই জারিফ মাথা কাত করে পাখি দেখায় মশগুল হলো। চোখে তার অবাক বিস্ময়, ‘কী দেখছে এসব!’—এমন চাহনি ছিল তার। পাখিদের রেখে জারিফের তাকানোতেই চোখ স্থির করলাম। জারিফ যতবার নতুন কিছু দেখে, ততবার সে চমৎকৃত হয়। এত মিষ্টি সেই দৃশ্য! মানুষ বড় হয় বিস্ময়াভিভূত হতে হতে। আর সেই বিস্মিত চেহারা দেখে মনে আনন্দ খেলে যাওয়ার পরম সুখের মুহূর্ত পায় ভাগ্যবানেরা।

এখন কোকিলের সঙ্গে জারিফ খেলা করে। গানের কলি খেলার মতো। কোকিলটা এত মিশুক যে রাগ করে না, বিরক্ত হয় না, থেমেও যায় না। জারিফও থামে না। নীরব জংলায় মানুষ আর পাখির বন্ধুত্ব জমে ওঠে ক্লান্ত বিকেলে। অপূর্ব সেই দৃশ্য আর বন্ধুত্বের ক্ষণ উপভোগ করতে থাকি মুগ্ধ নয়নে, যেন স্বর্গীয় সুখ পৃথিবীতে নেমে আসে ওই একটি প্রহরে।

বন্ধু, সিলেট বন্ধুসভা