কলকাতার আভিজাত্য হলুদ ট্যাক্সি

হলুদ ট্যাক্সিছবি: সংগৃহীত

হুগলি নদীপারের ব্যস্ত শহর কলকাতা। এই শহরের সঙ্গে হলুদ ট্যাক্সির রয়েছে অনন্য এক সখ্য। হলুদ ট্যাক্সি একসময় ছিল ভারতের আভিজাত্যের চিহ্ন।

কলকাতায় গিয়েছেন আর হলুদ টেক্সি ক্যাবে ওঠেননি, এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। যদিও এসব ট্যাক্সিতে এসি নেই; তবে খোলামেলা এবং ভেতরে যথেষ্ট জায়গা থাকে।
আধুনিকতার এই যুগে হলুদ ট্যাক্সির চাহিদা একটু কম। তা সত্ত্বেও এখনো কলকাতা শহরে চলছে প্রায় ২০ হাজারের মতো হলুদ ট্যাক্সি।

১৯০৯ সালে শহরটিতে প্রথম আসে এই পরিবহন। ২০১৪ সালে এসে বন্ধ হয়ে যায় ভারতে প্রথম তৈরি এই গাড়ির উৎপাদন। বর্তমানে চৌরঙ্গী রোডের যেখানে ফ্র্যাঙ্ক রস কোম্পানির ওষুধের দোকান রয়েছে, সেখানেই ছিল ফরাসি শেভিজাঁ কোম্পানির অফিস। তারাই কলকাতার পথে প্রথম ট্যাক্সি চালু করে।

সে সময় চৌরঙ্গী থেকে মিটারওয়ালা গাড়ি পৌঁছে যেত দমদম, ব্যারাকপুর, বজবজে। তখন গাড়িগুলোয় মাত্র দুজন যাত্রী বসার সুযোগ থাকত। টকটকে লাল রঙের এই গাড়িতে প্রতি মাইলে নির্দিষ্ট ভাড়া ছিল আট আনা।

এটাই ছিল কলকাতার ট্যাক্সির পূর্বপুরুষ। এর কিছু বছর পর ব্যবসায় আসে ইন্ডিয়ান মোটর ট্যাক্সি ক্যাব অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। যেহেতু সব ট্যাক্সির নম্বর শুরু হতো ইংরেজি ‘এ’ অক্ষর দিয়ে, তাই যাত্রীরা ভালোবেসে বলত এ কোম্পানি।

১৯৬২ সালে কলকাতার ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশন এই অ্যাম্বাসেডর গাড়িকে ট্যাক্সিতে পরিণত করার প্রস্তাব পেশ করে। প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়ে সেই বছরই শহরে নামে এই আইকনিক গাড়ি। হলুদ রং খুব সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তাই ট্যাক্সিতে এই রং করা হয়েছিল।

এই ট্যাক্সি ভারতে তৈরি প্রথম গাড়ি। সেই সঙ্গে ভারতের প্রথম ডিজেল–চালিত গাড়ি। পশ্চিমবঙ্গের হিন্দমোটরে এই গাড়ি অ্যাসেম্বল করা হতো। সেই সূত্র ধরে হিন্দমোটরের আশপাশের এলাকাটা জমজমাট এক শহরে পরিণত হয়।

রাস্তায় নামার কিছু বছরের মধ্যে কলকাতার সবার কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এসব ট্যাক্সি। প্রথমে রং ছিল কালো ও হলুদ। কালো ট্যাক্সি শুধু শহরের মধ্যেই থাকত। আর হলুদ ট্যাক্সি চলে যেত শহর থেকে দূরে। তারপর ধীরে ধীরে হারিয়ে যায় কালো রঙের গাড়িগুলো। আর হলুদ ট্যাক্সি হয়ে ওঠে কলকাতার নস্টালজিয়া। হয়তো এই নস্টালজিয়াও খুব তাড়াতাড়ি আমরা হারিয়ে ফেলতে পারি। তখন লেখা থাকবে কেবল ইতিহাসের পাতায়।

বন্ধু, ঢাকা মহানগর বন্ধুসভা