আবার দেখা হবে বন্ধুত্বের প্রগাঢ় আহ্বানে, নতুন কোনো উৎসবে

সুইমিংপুলের সামনে বন্ধুদের জটলা, একটু পরই জলকেলিতে মেতে ওঠেন সবাই
ছবি: শাকিব হাসান

‘নির্ঘুম রাত শেষে যেন স্বপ্নের ভোর
বন্ধুর পথ পেরিয়ে এল সোনালি প্রহর’

শুভ্র শুক্রবার কারও কাছে ঘুম দিবস, কারও কাছে উৎসবের রঙে রঙিন হওয়ার দিন। আবার কারও কাছে গুছিয়ে রাখার, কথা বলার, প্রিয়জনের চোখে চোখ রেখে হারিয়ে যাওয়ার দিন। এর সবকিছু ভুলে ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলো বন্ধুসভার বন্ধুরা ‘শৌখিন ঘুড়ি ও পিঠা উৎসবে’ মেতে উঠেছিলেন কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন কলাতিয়া ইউনিয়নের অতিথি পাখি রিসোর্ট অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট–সংলগ্ন নাওখোলা লেকপাড়ে।

বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সহযোগিতায় ও কেরানীগঞ্জ বন্ধুসভার আয়োজনে সকাল থেকেই দূরদূরান্ত থেকে স্বপ্নবান একদল বন্ধু জড়ো হন উৎসবের ভেন্যুতে। নতুন জায়গা, নিরবচ্ছিন্ন তথ্যের সমন্বয়হীনতায় কিছু বন্ধুকে শুরুতে বিপাকে পড়তে হয়। তবে সেই কালো মেঘ সরে গেছে তাৎক্ষণিক, পত্রপল্লবে সজ্জিত ক্যাফের ভেন্যু পরিদর্শনে।

বসন্তের সোনালি রোদে প্রস্তুত রাখা নাটাই-ঘুড়ি নিয়ে হইহুল্লোড়ে মেতে ওঠেন বন্ধুরা। প্রাকৃতিক লেকের স্বচ্ছ জলের কাছ জেগে ওঠা চরে সবুজ ঘাস যেন স্বর্গের কার্পেট, তারই ওপর দাঁড়িয়ে হাত দুটি বাড়িয়ে নাটাইয়ের সুতায় উড়ছে যে ঘুড়ি, যেন স্বপ্নপুরী! রঙিন সুতা, রঙিন ঘুড়ি, উড়ি উড়ি সুখে ভেসে গেছে সব ক্লান্তি, মিশে গেছে জলে-স্থলে!

ঘুড়ি ওড়ানো আবহমান গ্রামবাংলার ঐহিত্য, বন্ধুরা একটি দিনের জন্য সেই ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে যান
ছবি: শাকিব হাসান

দুপুরে জুমার আজানের ধ্বনি যখন শুনি, হৃদয়ে শীতল অনুভূতি নিয়ে ফিরে আসি অনুষ্ঠানস্থলে। তখনো সুতায় টান পড়া ঘুড়ির শব্দ বাজে হৃদয়ের অলিগলিতে। রিসোর্টের অন্যতম সৌন্দর্যের আধার, নীল জলরাশি বুকে সুইমিংপুলে সাঁতার! কে হায় ডুব না দিয়ে হৃদয়ের যাতনা বাড়ায়! একে একে বন্ধুদের ঝাঁপাঝাঁপি, শীতল জলে কারও কাঁপাকাঁপি, জলকেলিতে হৃদয়ের উচ্ছ্বাস উপচে পুষ্পের মতো প্রস্ফুটিত হলো উল্লাস।
সব ক্লান্তি ধুয়ে, নামাজের বিরতি শেষে, ক্ষুধাতুর চোখ খোঁজে ভোজের থালি। ঠিক যখন দুইটা বাজে ঘড়িতে, খাবার প্রস্তুত হাঁড়িতে!

সারিবদ্ধ বন্ধুদের অনবদ্য ধৈর্যে, খাবার আসে হাতে হাতে! আহা! প্রত্যাশার অধিক তৃপ্তিতে, অপার মুগ্ধতায় আহার করতে করতে মনে হচ্ছিল মাছ-মাংস খেয়েছি অনেক, খেয়েছি পোলাও-বিরিয়ানি-কোরমা, এতটা তৃপ্তি জাগেনি মনে শুধুই ভর্তা-ভাতে!
কেরানীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ক্ষুদেভাত, চিংড়িভর্তা, আলুভর্তা, ডিম ভুনা, বেগুনভাজা আর ঘন ডালে উদরপূর্তি শেষে মজার খেলায় মেতে ওঠেন বন্ধুরা পড়ন্ত দুপুরে!
ঐতিহ্যের হাঁড়িভাঙা, বালিশ খেলায় অংশ নিয়েছেন আগত সব বন্ধু। হাঁড়ি ভেঙেছেন জাফর সাদিক, উত্তম রায়, শুভ ও শুদ্ধ! ‘তুমুল উল্লাস আর কিছুটা নালিশে, লড়াই হয়েছে বেশ বালিশে’। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে প্রথম হয়েছে কেরানীগঞ্জ বন্ধুসভা, দ্বিতীয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা।

সবার মনে একটিই প্রশ্ন, বন্ধুটি হাড়ি ভাঙতে পারবে তো?
ছবি: শাকিব হাসান

অতঃপর বিজয়ীর বেশে লড়াকু সৈনিকেরা উপহারের ঢালিতে হয়েছেন সম্মানীত, বন্ধুরা করতালিতে হয়েছেন বিমোহিত!  
উপহার হিসেবে ছিল মহা মূল্যবান বই! কবি ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হকের ‘লেখক সঙ্গ স্মৃতি আনন্দ’, জাফর সাদিকের ‘যে কবিতা জীবনানন্দের নয়’, দন্তস্য রওশনের ‘প্রেমের অণুকাব্য’সহ বিয়ের প্রস্তুতি নিয়ে ম্যাগাজিনসমগ্র!

খেলাধুলায় কিছুটা ক্ষুধা জাগ্রত হতে হতেই সামনে চলে আসে কাঙ্ক্ষিত পিঠা, মিঠা ও ঝাল! আহা! অমৃত আস্বাদ! যাঁরা বানিয়েছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ। ফাঁকে ফাঁকে গানের আসর চলে, কথা ছিল কবিতার, সম্মানীত অতিথিদের বক্তব্যে ছিল বন্ধুতা ও হৃদ্যতার! কথা বলেন বন্ধুসভা জাতীয় পর্ষদের সভাপতি উত্তম রায়, সাধারণ সম্পাদক জাফর সাদিক, কার্যকরী সদস্য সায়মন চৌধুরী, ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার সভাপতি বহ্নি শিখা, কেরানীগঞ্জ বন্ধুসভার উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান, প্রথম আলোর প্রতিনিধি ইকবাল রতন, কেরানীগঞ্জ বন্ধুসভার সভাপতি এইচ এম রুবেল প্রমুখ।
স্মৃতির পাতায় পাতায় স্থিরচিত্র সংগ্রহে সারাক্ষণ যুদ্ধ চালিয়ে গেছেন সবার প্রিয় শাকিব হাসান ভাই। জাতীয় পর্ষদ, ঢাকা মহানগর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ ১৫টি বন্ধুসভার ২ শতাধিক বন্ধুর মিলনমেলায় মুখর ছিল উৎসবের প্রতিটি ক্ষণ!

যখন পাল তুলে ফিরে যাব নীড়ে, তখন কানে বেজে উঠল ‘দে দে পাল তুলে দে’ গানটি! মনে হচ্ছিল, বন্ধুরা ভালোবাসার সাম্পানে পাল তুলে দিয়ে ডাকছে, ‘ওরে আয়, ফিরে যাই নীড়ে, আবার দেখা হবে বন্ধুত্বের প্রগাঢ় আহ্বানে, নতুন কোনো উৎসবে’।

সভাপতি, কেরানীগঞ্জ বন্ধুসভা