পাঠাগার হোক আগামী প্রজন্মের বাতিঘর

পাঠাগারে বই পড়ছে শিশুরাফাইল ছবি

বই পড়া নিয়ে ওমর খৈয়াম বলেছিলেন, ‘রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ দুটি ঘোলাটে হয়ে আসবে, কিন্তু বইখানা অনন্ত যৌবনা, যদি তেমন বই হয়।’ বই অনন্ত যৌবনা হলে পাঠাগার হবে একটি বাতিঘর। মনের যত্ন নিতে বইয়ের বিকল্প নেই। একটি ভালো বই হতে পারে মনের সবচেয়ে বড় দাওয়াই। পাঠাগার হবে মনের হাসপাতাল।

স্কুলে পড়ার সময় চট্টগ্রামের কালের সাক্ষী ‘অমর বই ঘরে’ গিয়ে অর্ধেক মূল্যে পুরোনো বই সংগ্রহ করতাম। যখন কোনো পাঠাগার কিংবা বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে পড়ার জন্য বই সংগ্রহ করি, তখন নিজের কাছে মনে হতো বই নয় যেন আনন্দমিশ্রিত আলো সংগ্রহ করছি। সেই বই নিজে পড়ে আবার সহপাঠীদের পড়তে দিতাম।

একাত্তরের চেতনাকে হৃদয়ে লালন করে মাতৃভূমির জন্য যাঁরা আত্মত্যাগ করেছেন, তাঁদের স্মৃতি রক্ষার্থে মহৎ কিছু করার ইচ্ছা ছিল অনেক দিনের। উদ্দেশ্য সচেতনতামূলক কাজ, সমাজের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো এবং বোধগম্য সৃষ্টি করা। বিশেষ করে নিষ্পেষিত মানুষের প্রতি ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠা করি মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ছবুর ফেসবুক গ্রুপ। একদিন ভাবলাম, নিজভূমে শিশুদের জন্য কিছু একটা করতে হবে। পটিয়ায় শিশুতোষ পাঠাগার ছিল না। যে করেই হোক পটিয়ায় একটি শিশুতোষ পাঠাগার স্থাপন করব। জীবনের প্রথম পাঠ নেওয়া পটিয়া পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম পটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ইতিকথা জানতে গিয়ে দেখলাম, এই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রদের মধ্যে ১১ জন ছিলেন একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাঁদের একজন হলেন শহীদ ছবুর।

শহীদ ছবুর শিশুতোষ পাঠাগার
ছবি: বন্ধুসভা

স্কুলে একটি খালি কক্ষ ছিল। সেখানে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি সিরাজুল মোস্তাফাকে পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনার কথা বললে তিনি রাজি হয়ে যান। স্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহিনা ইয়াছমিনও পাঠাগারের কথা শুনে খুশি হলেন। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন চট্টগ্রাম চারুকলা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ সবিহ্ উল আলম এবং ইতিহাসের খসড়ার সম্পাদক শামসুল হক।

২০১৯ সালের ২৮ মার্চ সকালটা ছিল অন্য রকম। সোনা ঝরা কাঁচা মিষ্টি রোদের ঝলকানি। গাছে নতুন পাতা দেখে মনে হচ্ছে যেন চিরসবুজ শাড়ি দুলছে। পশ্চিম পটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বসেছে চাঁদের হাট। গ্রামে শহীদ ছবুর শিশুতোষ পাঠাগার প্রতিষ্ঠা উপলক্ষে সবাই যেন খুশিতে আত্মহারা।

বর্তমানে পাঠাগারে দুই হাজারের বেশি শিশুতোষ বই রয়েছে। বড়দের জন্য রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাসভিত্তিক বেশ কিছু বই। নিয়মিত জাতীয় পত্রিকাও থাকে। প্রতিদিন বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশুরা বই নিয়ে যায়, বই পড়ে আবার ফেরত দেয়। স্কুলের মধ্যাহ্নবিরতিতে শিশুরা পাঠাগারে বেশ আনন্দের সঙ্গে বই পড়ে। মাঝেমধ্যে সেখানে গেলে শিশুদের বই পড়ার দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হই। কেউ বই পড়ছে, কেউ ছবি আঁকছে।

বন্ধু, চট্টগ্রাম বন্ধুসভা