বন্ধুসভাকে কেন ভালোবাসি

বন্ধুসভা মানব লোগোছবি: হাসান মাহমুদ

আমাদের গুড়ের দোকানে পোঁটলা বাঁধার জন্য পুরোনো পত্রিকার ব্যবহার হতো। সে কারণে আব্বা কটিয়াদী সদর থেকে কেজির দরে পুরোনো পত্রিকা কিনে আনতেন। পত্রিকা কীভাবে পড়তে হয়, সেই ধারণা তখন আমার ছিল না। বিনোদন আর ফিচার পাতাগুলো পড়া হতো। বিশেষ করে ‘ছুটির দিনে’ পাতাটি বেশি পড়তাম। সঙ্গে বন্ধুসভার পাতাও। সেসব পাতায় সোহেল নওরোজের লেখা ছাপা হতো। তখন তিনি ময়মনসিংহ কৃষি বিদ্যালয়ে পড়তেন। আমার ধারণা ছিল, তিনি ময়মনসিংহের অধিবাসী।

ময়মনসিংহের একজনের লেখা যদি পত্রিকায় ছাপা হয়, তাহলে আমার লেখাও তো ছাপা হতে পারে। সোহেল নওরোজের লেখা দেখে আমার পত্রিকায় লেখা ছাপানোর ইচ্ছে জাগে। কিন্তু কী লিখব? তখনো আমি স্কুলে পড়ি। বারবার চেষ্টার পরও লেখা মানসম্মত হচ্ছিল না। এসএসসি পাস করে কিশোরগঞ্জ সদরে চলে আসি। গুরুদয়াল সরকারি কলেজে ভর্তি হই।

গ্রামের বাজারে কেউ প্রথম আলো রাখত না। সবাই ছোট কলেবরের পত্রিকা রাখতেন। তাই প্রথম আলো পড়ার তৃষ্ণা আমার থেকেই গেল। এইচএসসিতে ভর্তি হয়ে যখন মেসে উঠলাম, তখন দেখি সবাই প্রথম আলো পড়ে। আমি পড়তাম ‘ছুটির দিনে’, ‘বন্ধুসভা’ ও ‘স্বপ্ন নিয়ে’ পাতা। তখন হাতে স্মার্টফোন এল। ফেসবুকে নাম লেখালাম।
তখনো ফেসবুকে বাংলা লেখা সহজলভ্য হয়নি। আমি বাংলিশে ছড়া লিখতাম। এরপর স্মার্টফোনে বাংলা এল। আমি তখন বিভিন্ন ছড়া-পদ্য লিখে স্ট্যাটাস দিতাম। এরপর একদিন কোচিংয়ের এক উত্তরপত্রে একটি গল্প লিখে ফেলি। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে প্রথম আলোয় লেখা পাঠাই। কিন্তু ছাপানো হয়নি, যেন এটা প্রত্যাশিত ছিল।
এরপর অনার্সে ভর্তি হই। ‘লীলাবতী’ নামে একটা সিরিজ ছড়া ছিল। শফিক ভাই নামের বাংলা বিভাগের এক বড় ভাই একটা সাহিত্য সংগঠন চালাতেন। তিনি আমাকে কিশোরগঞ্জের সাহিত্যাঙ্গনের মানুষদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।

সেই থেকে পুরোদমে লেখালেখি শুরু। একদিন বন্ধুসভা পাতায় দেখি, পাঠকের লেখা চেয়ে ই–মেইল ঠিকানা দেওয়া হয়েছে। আমি বেশ কয়েকটা অণুগল্প পাঠাই। লেখা আর ছাপা হয় না। প্রতি সপ্তাহে আমি বন্ধুসভার পাতায় নিজের নাম খুঁজি। তখন স্থানীয় পত্রিকায় আমার ছড়া, কবিতা ও গল্প ছাপা হয়েছে। কিন্তু যে পত্রিকার পাতায় নিজের নামটি দেখব বলে এত স্বপ্ন, সেই পত্রিকায় আমার কোনো লেখা ছাপা হয় না।
হঠাৎ একদিন দেখি আমার গল্প ছাপা হয়েছে। আনন্দ আর দেখে কে? যে বন্ধুটি আমার লেখালেখি নিয়ে ব্যঙ্গ করত, সে আমাকে প্রথম খবর দেয়। এরপর একদিন দন্তস্য রওশন ভাইয়ের ফোন। তিনি বলেন, ‘আপনি তো ভালো লেখেন। আপনি আরও লেখা পাঠান।’

লেখকজীবনের সেই দিন আমি ভুলতে পারব না। আগে থেকে প্রথম আলোর প্রতি দুর্বল ছিলাম, সেদিন থেকে আরও বেশি প্রেমে পড়ে গেলাম। প্রথম আলো বন্ধুসভা আজ ২৪ বছরের যুবক। আমি ২৯-এর কোঠায়। বুড়ো হলেও বোধহয় বন্ধুসভায় লেখা পাঠিয়ে যাব। প্রথম প্রেম ভোলা যায় না।