মানুষ কি আসলেই মানুষের জন্য

অলংকরণ: স্বপন চারুশি

আমরা হতে চাই কারও সঙ্গী, সহজ পথের অংশীদার, পৌঁছাতে চাই সুখের নীড়ে। কিন্তু সেই মানুষগুলো আমাদের প্যান-আমেরিকান হাইওয়ের মতো পৃথিবীর দীর্ঘ ৩০ হাজার কিলোমিটার রাস্তা দেখিয়ে দেন। বলেন, ‘যাও, ঘুরে আসো, পার হও, শেষ সীমান্তে গিয়ে দাঁড়াও, ভোরে নেমে দৌড়াও।’ আমাদের ইলেকট্রিক সার্কিটের মতো শর্ট দেন অন্তর্দেশে, যে আঘাত শিরায় শিরায় যন্ত্রণা করে, রক্তের প্রবাহ আটকে ফেলে। নিশ্বাস বন্ধ করে দেয়।

‘মানুষ মানুষের জন্য’—বাক্যটা এখন বদলে গেছে। স্বার্থ আছে, তো মানুষ আছে। লক্ষ করলে দেখবেন, খারাপ সময়ে যাঁদের বিদ্যুতের গতিতে আমাদের দিকে ছুটে আসা উচিত, তাঁরা ন্যানোর গতিতে উল্টো দূরে চলে যান। অদৃশ্য হয়ে যান। দৌড়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলেন না, ‘চিন্তা কোরো না, আমি আছি। আমি বেঁচে আছি এখনো।’

যাঁদের দিকে তাকিয়ে লম্বা নিশ্বাস নিতে চাই, কিংবা যাঁদের কাছ থেকে বেশি আশা রাখি, তাঁরা আমাদের বারবার হতাশা উপহার দেন। যাঁদের দুই মিনিটের মধুর কথা আমাদের জীবনকে সহজ করে তোলে, তাঁরা আমাদের খারাপ সময়ে পাশে থেকে উৎসাহ দেন না। হিতে বিপরীত করে মন ভেঙে রাতের বালিশ নোনাজলে ডোবাতে সাহায্য করেন। ঘুম উধাও করে নিরুদ্দেশে দিয়ে আসে। আলো-অন্ধকার এক করে ফেলে।

যাঁরা খুব কাছের বা আত্মার অস্তিত্বে মিশে আছেন বলে মনে করি, তাঁরা আমাদের স্বার্থের সঙ্গে মিশে থাকেন। আমরা কাছের ভাবলেও তাঁরা আমাদের দূরের অপরিচিত মনে করেন। উৎসাহ দেন না, হাত ধরে টেনে তোলেন না, পথকে ক্ষুদ্র করেন না, প্রাণখুলে হেসে কাছে ডাকেন না, বিপদে হাত বাড়িয়ে দেন না—উল্টো এক হাঁটু কষ্টকে গলাসমান করে দেন।

খোলা মাঠ থেকে আকাশের দিকে তাকালে মনে হয়, আকাশ পাহাড়ের সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে আছে। কিন্তু সেই জায়গায় গেলে মনে হয়, আকাশ আরও বহু দূর। আমাদের চোখ ও মনে ভুল ছিল আকাশ ও পাহাড় সম্পর্কে। কাছের মানুষগুলোও এ উদাহরণের মতো। তাঁদের কাছে গেলে বুঝবেন, অনেক দূর।

শিক্ষার্থী, সরকারি সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম