জীবনালাপ

প্রতীকীছবি: সুমন ইউসুফ

খাবার খাওয়ার সময় খেয়াল করবেন সাধারণত মানুষ সবজি, ভর্তা বা তুলনামূলক কম মানের তরকারি দিয়ে খাবার শুরু করে, এমনকি তার প্লেটে মাছ বা মাংস থাকলেও। আর শেষ করে মাছ বা মাংস দিয়ে। কেন?

মানুষের একটা প্রতিষ্ঠিত তাড়না হচ্ছে তাকে শেষটা ভালোভাবে করতে হবে। আবহমান কাল থেকে সে শুনে এসেছে—‘শেষ ভালো যার সব ভালো তার’। সে জন্য ভালো খাবারটা শেষে খাওয়ার জন্য রেখে দেয়। এখানেও লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, যখন সে খাওয়া শেষ করে, তখনই অতৃপ্তি এবং কিছুটা প্রিয় খাবার হারানোর বেদনা উপস্থিত থাকে।

মানুষ সাধারণত শুরু ও শেষ নিয়ে আনুষ্ঠানিকতা করে। শুরু করে প্রবল উদ্দীপনা নিয়ে আর শেষ করে আক্ষেপ আর না পাওয়ার বেদনা দিয়ে।

প্রথমত, মানুষ সব সময় কেন অপূর্ণতার জ্বরে ভোগে? কেন সে মনে করে আরও ভালো করা যেত? কারণ হচ্ছে, মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে সর্বোত্তম আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য দিয়ে, কিন্তু সক্ষমতা দেওয়া হয়েছে খুবই সীমিত। এই সর্বোৎকৃষ্ট সৃষ্টি ও দুর্বল সক্ষমতার বিশাল পার্থক্যের কারণে মানুষ সব সময় তার কৃতকর্ম নিয়ে অসন্তুষ্ট থাকে। সে মনে করে, আরও অনেক গুণ ভালো করা সম্ভব।

দ্বিতীয়ত, মানুষের এই শেষ ও শুরুর আনুষ্ঠানিকতার কারণ কী? কেন মাঝের সময়গুলো আনুষ্ঠানিকতার বাইরে থেকে যায়? কারণ হলো, মানুষের মজ্জাগত প্রকৃতি হচ্ছে সে লাভ-লোকসানের তেজারতে মত্ত থাকতে চায়। কোনো কাজ করার আগে ভাবে—এই কাজ করে কী লাভ! আর কাজ শেষ করার পর হিসাব কষতে বসে—কত লাভ বা লোকসান হলো।

মানুষের এই প্রাকৃতিক তেজারতি স্বভাবের কারণে শুরুর সময়ে লাভের চিন্তা করে প্রফুল্ল হয় আর শেষের সময়ে প্রত্যাশিত লাভ না পাওয়ায় হতাশ হয়। মাঝের সময় যেহেতু তেজারতি পসরা চলে, তাই লাভ-লোকসানের হিসাব কষার ফুরসত নেই। তাই মাঝের সময়ে কোনো আনুষ্ঠানিকতা নেই।

তৃতীয়ত, মানুষের আয়ুর অর্ধেক চিন্তার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে হারার ভয়। আর বাকি অর্ধেক চিন্তা বিজয়–পরবর্তী উদ্‌যাপন নিয়ে। মানুষ সাধারণত বিজয় অর্জনের চিন্তা ও পন্থা সম্পর্কে ভাবার ও কাজ করার খুব কম সময় পায়। ফলে যারা পরাজিত হয়, তারা কাঙ্ক্ষিত জিনিসটাই পায়। আর যারা বিজয় লাভ করে, তারা অনাকাঙ্ক্ষিত প্রাপ্তির জন্য গর্ব অহংকারে মত্ত হয়ে উন্মত্ত হয়ে পড়ে।