রসাল আমের ইতিহাস

আম, মডেল: মারিয়া নূরছবি : নকশা

আম গ্রীষ্মকালীন ফল হলেও এটি এখন পৃথিবীর সর্বত্র পাওয়া যায়। বাংলাদেশের জাতীয় ফল আম না হলেও ফলের রাজা হিসেবে এটির স্বাদ বাঙালিরা গ্রহণ করছে। জাতীয় বৃক্ষ হিসেবে আমগাছ যেমন রাজকীয় সম্মান পায়, তেমনি রসাল টসটসে পাকা আমের স্বাদ সবাইকে মাতিয়ে রাখে। আমের রসনা সাধারণ জনগণ হোক বা রাজা–উজির সবাইকে তৃপ্ত করে। ইতিহাসে দেখা যায়, সম্রাট বাবর থেকে শুরু করে সম্রাট জাহাঙ্গীর, শাহজাহান পর্যন্ত আমের রসনা নিয়ে মাতামাতি করেছেন। মোগল সম্রাট বাবর তাঁর জীবনচরিত ‘বাবরনামা’য় আমকে সব ফলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে মতামত দিয়েছেন। এ জন্য তিনি আমের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য বিহারের দারভাঙার লাখিবাগে এক লাখ আমগাছের এক বিরাট বাগান করেছিলেন। তাঁর পথ অনুসরণ করে সম্রাট জাহাঙ্গীর ও শাহজাহান দিল্লি ও লাহোরে আমবাগান করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

আমের স্বাদে আমাদের কবি–সাহিত্যিকেরাও মোহিত। ছোটবেলায় বর্ণ পরিচয়ে আমরা শিখেছি আ-তে, আমটি আমি খাব পেড়ে। ভারতীয় কবি ও দার্শনিক আমীর খসরু আমকে বলেছেন ‘নাগজা তারিন মেওয়া হিন্দুস্তান’ বা হিন্দুস্তানের সবচেয়ে সুন্দর ফল। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের যেমন কাঁচা আমের আমসত্ত্ব নিয়ে কবিতা প্রেম ফুটে উঠেছে, তেমনি পল্লিকবি জসীমউদ্‌দীনের কবিতায় ‘ঝড়ের দিনের মামার দেশে আম কুড়াতে সুখ’ উঠে এসেছে।

আমের নামকরণের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে প্রথম পাঁচ হাজার বছর আগে আমের চাষ করা হয়। ব্রিটিশরা পঞ্চদশ এবং ষোড়শ শতকের দিকে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে ব্যবসা শুরু করে, তখন থেকে ‘ম্যাঙ্গো’ শব্দটির উৎপত্তি। ইংরেজিতে ম্যাঙ্গো শব্দটি সম্ভবত তামিল ‘ম্যানকেই’ কিংবা ‘মানগা’ শব্দ থেকে এসেছে। দশম শতাব্দীর শুরুর দিকে আফ্রিকাতে আমের চাষ হয়। চতুর্দশ শতাব্দীতে উত্তর আফ্রিকার মহান পর্যটক ও পণ্ডিত ইবনে বতুতার লেখায় সোমালিয়ার মোগাদিসুতে আম দেখার তথ্য পাওয়া যায়। ইউরোপীয়রা এ দেশে মসলার বাণিজ্য শুরু করলে সপ্তদশ শতাব্দীর দিকে আমেরিকান উপনিবেশগুলোতে আমের দেখা মেলে।

আম পাকিস্তান, ভারত ও ফিলিপাইন—এ তিন দেশের জাতীয় ফল। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আম উৎপন্ন হয় ভারতে। এরপরই চীন ও থাইল্যান্ডের অবস্থান। ইউরোপীয় অঞ্চলের একমাত্র দেশ হিসেবে স্পেনের মালাগার তুষারপাতমুক্ত এলাকায় আম জন্মে।

এখন পর্যন্ত সবচেয়ে প্রাচীন যে আমগাছের সন্ধান পাওয়া গেছে, সেটির বয়স প্রায় ৩০০ বছর। মধ্য ভারতের পূর্ব কান্দেশে আছে সেই আমগাছ। আশ্চর্যের বিষয়, প্রাচীনতম গাছটি এখনো ফল দিচ্ছে।