প্রতিদিন রোজাদারদের সাহ্‌রি খাওয়ান তাঁরা

প্রতিদিন রোজাদারদের সাহ্‌রি খাওয়ার ব্যবস্থা করছেন এই তরুণেরাছবি: সংগৃহীত

গভীর রাতে ভৈরব স্টেশন–সংলগ্ন এলাকায় একদল তরুণকে দেখা গেল, হ্যান্ডমাইকে রোজাদারদের ডাকছেন। ছিন্নমূল ও অসহায় মানুষদের স্টেশনের পাশের ভাতের হোটেলে নিয়ে গিয়ে নিজ হাতে পরিবেশন করছেন ভাত ও তরকারি। পবিত্র রমজান মাসে ভৈরবের তরুণদের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ অসহায় রোজাদারদের মুখে তুলে দিচ্ছে সাহ্‌রির খাবার।

এই মানবিক আয়োজনের গোড়াপত্তন আজ থেকে পাঁচ বছর আগে। প্রথমে ইফতারি বিতরণ দিয়ে শুরু হলেও পরে একদিন স্টেশনের পথে এক বৃদ্ধকে দেখে উদ্যোগটির পরিধি আরও বড় করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই বৃদ্ধ রুটি আর কলা খাচ্ছিলেন। জিজ্ঞাসা করা হলো, বাড়ি কোথায়? সাহ্‌রিতে ভাত খেয়েছেন কি না? তিনি বললেন, ‘গতকালও রুটি-কলাই খেয়েছি, আজও তা–ই খাচ্ছি। টাকা নাই, কই পাইব ভাত? যা পাই তা–ই খাইয়া রোজা রাখি।’

সেই দিন থেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সাহ্‌রির দায়িত্বও নিতে হবে। এর পর থেকে টানা তিন বছর ধরে গভীর রাতে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন তরুণেরা। পথশিশু, ভবঘুরে, শ্রমজীবী মানুষ ও অসহায় রোজাদারদের জন্য খাবার ব্যবস্থা করে দেওয়াই তাঁদের মূল লক্ষ্য।

প্রতিদিন রোজাদারদের সাহ্‌রি খাওয়ার ব্যবস্থা করছেন এই তরুণেরা
ছবি: সংগৃহীত

এ উদ্যোগের অন্যতম আয়োজক ভৈরব বন্ধুসভার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিদরাতুল রশিদ। তিনি বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, প্রতিদিন রোজাদারদের খাবার দিতে পারছি। ইনশা আল্লাহ, যত দিন বেঁচে আছি, রমজান মাসে রাত দুইটায় বের হব, রোজাদারদের সাহ্‌রি খাইয়ে বাসায় ফিরব।’

ভৈরব বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক এরফান হোসেন, প্রচার সম্পাদক হান্নান হিমু, কার্যনির্বাহী সদস্য মানিক আহমেদসহ ভৈরবের অনেক তরুণই এই মহৎ কাজে অংশ নিচ্ছেন।

প্রথম আলো বন্ধুসভা একটি পাঠক সংগঠন হওয়ার পাশাপাশি, এটি মানবতার এক নিরবচ্ছিন্ন প্ল্যাটফর্ম। বন্ধুসভার উদ্যোগে যেমন নানা সামাজিক, মানবিক কাজ চলে, তেমনই বন্ধুরাও নানা কার্যক্রম করেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বন্ধুসভার বন্ধুরা এভাবেই মানবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন, সমাজের অবহেলিত মানুষদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। এই ধরনের উদ্যোগ সমাজের অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। শুদ্ধ চিন্তায় এভাবেই এগিয়ে যাবে তরুণসমাজ।

সভাপতি, ভৈরব বন্ধুসভা