ছন্দে ও শৈল্পিক চর্চায় কবি আবুল হাসান ছিলেন বিচক্ষণ

আবুল হাসান (৪ আগস্ট ১৯৪৭—২৬ নভেম্বর ১৯৭৫)ছবি: সংগৃহীত

নীল দীর্ঘশ্বাসের কবি আবুল হাসানের ৪৮তম প্রয়াণদিবস আজ। ১৯৭৫ সালের ২৬ নভেম্বরের এই দিনে ঢাকার পিজি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। মৃত্যুর আগপর্যন্ত কবি বন্ধু সুরাইয়া খানম তাঁর পাশে ছিলেন। আবুল হাসানকে বাঁচানোর জন্য সুরাইয়া খানমের নিরন্তর চেষ্টা ভালোবাসার অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে আছে আজও।

ষাট-সত্তরের দশকের এই কবির কলমে প্রকৃতি, প্রেম, রাজনীতি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সার্থকভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। তাঁর কাব্যিক ভাষায় উঠে এসেছে মানুষের জীবনের গল্প, শৈশবের দুরন্ত স্মৃতি, অন্ধকারের মধ্যেও বেঁচে থাকার প্রেরণা, নিঃসঙ্গতা, দুঃখবোধ ও সীমাহীন আত্মত্যাগ। আবুল হাসান তাঁর প্রতিভার চূড়ান্তে পৌঁছে ১৯৭০ সালে এশীয় কবিতা প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছিলেন।

সমগ্র পৃথিবীতে ক্ষুধার যে এক অসহ্য যন্ত্রণা যুগের পর যুগ চলে আসছে এবং তা আজও আমাদের আশপাশে প্রবহমান। একটু তাকালে কবির মতো অনুধাবন করা সম্ভব হয়তো। কবি এই অসহায় অবস্থান থেকে শক্তভাবে উওরণ চেয়েছিলেন। তাই হয়তো কবি তাঁর ‘জন্ম মৃত্যু জীবনযাপন’ কবিতায় বলেছেন—
‘মৃত্যু আমাকে নেবে, জাতিসংঘ আমাকে নেবে না,
আমি তাই নিরপেক্ষ মানুষের কাছে, কবিদের সুধী সমাবেশে
আমার মৃত্যুর আগে বলে যেতে চাই,
সুধীবৃন্দ ক্ষান্ত হোন, গোলাপ ফুলের মতো শান্ত হোন’

প্রেমিক কবি আবুল হাসান তাঁর কবিতায় ছন্দে ও শৈল্পিক চর্চায় ছিলেন বিচক্ষণ। তিনি সুরাইয়া খানমকে লিখেছিলেন—
‘তুমি শিল্পিত বৃক্ষের চূড়া
দেবদারুর মতো মুগ্ধ কিন্নরের অবিনাশী গান’

এ ছাড়াও কবি বাংলার অপরূপ সৌন্দর্যের খেয়ালে কোথাও মেষপালকের বেশে আবার কোথাও অরণ্যের অন্ধকারে আদিম সরদার সেজে মহুয়ার মাটির বোতল ভেঙে উপজাতি রমণীর বল্কল বসন খুলে ঘুরে বেড়িয়েছেন। কবি এভাবে একের পর এক কবিতায় তাঁর প্রতিভার জানান দিয়ে পাঠক মহলে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তবে তা বেশি দিন তিনি দেখে যেতে পারেননি। কবি আবুল হাসান মাত্র ২৮ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পাড়ি জমান পরলোকে।

এ অল্প সময়েও তিনি সাহিত্যভান্ডারকে করেছেন সমৃদ্ধ। লিখেছেন তিনটি কাব্যগ্রন্থ ‘রাজা যায় রাজা আসে’, ‘যে তুমি হরণ করো’, ‘পৃথক পালঙ্ক’ একটি সংকলন, বেশ কয়েকটি কাব্যনাট্যসহ অসংখ্য কবিতা। কবি আবুল হাসান বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৫) ও একুশে পদক (১৯৮২) পুরস্কারে ভূষিত হন।

আবুল হাসান মুক্ত বিচরণ ভূমি। যেখানে আমরা সেই ভূমির সামান্য একজন মুক্ত চাষি। আমরা খুঁজে পাই নতুন করে তৈরি হওয়ার অনুপ্রেরণা। আবুল হাসানের মৃত্যুর ৪৮ বছরেও তাঁর কবিতার নামে, খ্যাতিতে, অর্জনে কোনো ভাটা পড়েনি।

ম্যাগাজিনবিষয়ক সম্পাদক, ড্যাফোডিল বন্ধুসভা