বই ব্যক্তিত্বে পরিবর্তন আনে

বইয়ের প্রতি সন্তানের ভালোবাসা বাড়াতে অভিভাবকদের বড় ভূমিকা রাখতে হবেফাইল ছবি

বই, দুই অক্ষরে খুব ছোট্ট একটি শব্দ। ভারত্ব বিশাল। বই যেমন অতীত ইতিহাস জানতে সাহায্য করে, নিঃসঙ্গতায় বন্ধুত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, কল্পনার জগতে ডুব দিতে শেখায়, তেমনি কখনো কখনো উত্তম দিকনির্দেশক হয়ে ওঠে। সৃজনশীল ভাবনা এনে দেয়। সমৃদ্ধ করে জ্ঞান ভান্ডার। বই পড়ে আসলে কী হয়? এমন প্রশ্ন আসতেই পারে। ‘ভালো বই পড়া মানে শতাব্দীর সেরা মানুষের সঙ্গে কথা বলা’, বলেছেন ফরাসি দার্শনিক দেকার্তে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন—‘বই হচ্ছে অতীত আর বর্তমানের মধ্যে বেঁধে দেয়া সাঁকো।’ আর পল্লীকবি জসীমউদ্‌দীন মনে করেন—‘বই আপনাকে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সকল দিকে নিয়ে যেতে পারে।’

বাংলাদেশে প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি আসে মাসজুড়ে বইমেলা নিয়ে। বিশ্বে দীর্ঘতম বইমেলা নামেও অভিহিত করা হয় আমাদের দেশের একুশে বইমেলাকে। এতে লেখক-পাঠকের মহাসমারোহ ঘটে। কিন্তু বছর বছর নিত্য নতুন বই বের হলেও পাঠকসংখ্যা কমে যাওয়াটা লক্ষণীয়, বিষয়টি আশঙ্কার। রুচিশীল মানুষ গঠনের পথে অন্তরায়। এর পেছনের কারণ খুঁজতে গেলে হয়তো বলা যায়, ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার দরুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিনোদনে ডুবে থাকা।

আগে অবসর সময়ে শিক্ষার্থীরা নানা রকম বই, ম্যাগাজিন কিংবা পত্রিকা নিয়ে বসতেন। এখন সেই জায়গা দখল করেছে ফেসবুক, ইমো, ইউটিউবে গান শোনা, সিনেমা, নাটক দেখা ইত্যাদি। ফলে কমে আসছে বইয়ের সঙ্গে পাঠকের সর্ম্পক। এখনো তরুণেরা পত্রিকা পড়েন, সেটা ওই বিসিএস কিংবা সরকারি চাকরি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার নেশায়। কিন্তু জানার জন্য পড়ার আগ্রহটা বরাবরই কমে যাচ্ছে। অথচ বইবন্দী সাহিত্যরস মনের কী দারুণ খোরাক! কিছু কিছু লেখকের লেখা পাঠক হৃদয়ে নেশা জাগায়। আবার এমন কিছু বই রয়েছে, যা মুহূর্তেই ব্যক্তিত্বে দারুণ পরিবর্তন এনে দেওয়ার সক্ষমতা রাখে। পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কেউ কেউ আবার বই পড়ুয়াদের এমন সংকটের কারণ হিসেবে দারিদ্র্যতাকে দায়ী করতে চান। কিন্তু আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এটা অজুহাত ছাড়া আর কিছুই নয়। দারিদ্রতা বই কেনার পথে বাধা হতে পারে। কিন্তু পাঠক তৈরিতে নয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় লাইব্রেরি, জেলায় জেলায় গণগ্রন্থাগার ছাড়াও দেশের আনাচকানাচে ব্যক্তিগত বা সাংগঠনিক উদ্যোগে গড়ে ওঠা অসংখ্য পাঠাগার রয়েছে। এ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি পাঠকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে বিভিন্ন ধরনের বই।

অনেকেই অভিযোগ করে থাকেন বাড়িতে বাচ্চারা পড়তে বসতে চায় না। বড়রাই যখন বিভিন্ন ডিভাইসে বুদ হয়ে থাকেন, সে ক্ষেত্রে বাচ্চাদের আর দোষ কোথায়? শিশুরা তো অনুকরণ প্রিয়। আপনি নিজে যখন নিয়ম করে বই বা ম্যাগাজিনে মগ্ন হয়ে থাকবেন, আপনাকে দেখে শিশুদেরও আগ্রহ জন্মাবে। বইয়ের ভেতর কী আছে তা জানার কৌতূহল সৃষ্টি হবে। এভাবে সে যেমন একজন শুদ্ধ পাঠক হয়ে উঠবে, তেমনি একজন সুনাগরিক হিসেবে জীবন গঠনের সুযোগ পাবে। জ্ঞান–গরিমায় একজন রুচিশীল ও মননশীল ব্যক্তিত্বে পরিণত হবে।

সহসভাপতি, কুড়িগ্রাম বন্ধুসভা