ভালো থেকো, সুস্থ থেকো

অলংকরণ: এস এম রাকিবুর রহমান

১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সকাল ৭.৩০টা

প্রিয় ত্রিণা,

শুভ সকাল, কেমন আছ? সকাল সকাল ভাবলাম, তোমায় একটা চিঠি লিখি। নিশ্চয়ই রাগ করে আছ! কত দিন হয়ে গেল তোমায় চিঠি লিখি না? রাগ করো না। আমি যে এমনই। সবকিছুই আজকাল ভুলে যাই। তোমাকেও মাঝেমধ্যে ভুলে যাই। তুমিই তোমার কর্মকাণ্ডে মনে করিয়ে দাও যে তুমি বেঁচে আছ, তোমায় মনে রাখতে হবে। আর জানো, আমি সত্যিই জানি না, আমি কেমন! এই কথা শুনে নিশ্চয়ই তোমার কপালে ভাঁজ পড়েছে আর অভিমান হয়েছে আমার ওপর। হোক, তোমার অভিমানও আমার কাছে মধুর মনে হয়।

জানো ত্রিণা, সকালে ঘুম থেকে উঠে বাড়ির ফুল তুললাম। উঠানের গাছগুলোতে অনেক ফুল ফুটছে প্রতিদিন। চন্দন জবা আর টগর (থোকা ও একক) ফুল বেশি ফোটে। ভোর সকালে ফুল তুলতে আমার যা ভালো লাগে, তোমায় বলে বুঝাতে পারব না। আজকের সকালটাও সুন্দর, হালকা ঝিরিঝিরি বৃষ্টিও হয়েছে। গতকাল হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর ‘বৌদ্ধধর্ম’ বইটা শেষ করেছি। বইটা পড়ে ভালো লেগেছে। তুমি পড়ো, তোমারও ভালো লাগবে। ইংরেজি বই পড়তে পড়তে কখনো বিরক্ত হলে মাঝেমধ্যে এমন বাংলা বই পড়বে, ভালো লাগবে।

তুমি বারবারই আমায় অনুরোধ করো, উন্নত জীবনের জন্য বিদেশে পাড়ি জমাতে। এই নিয়ে তোমার সঙ্গে কত ঝগড়া হলো। শেষে তুমি বিরক্ত হয়ে সে আশা ছেড়ে দিলে। তোমায় কি করে বোঝাই বলো, ষড়্ঋতুর এই দেশ ছেড়ে ওই দুই ঋতুর দেশ যে আমার ভালো লাগবে না। জীবন খুব সংক্ষিপ্ত; কি দরকার এই দেহটা নিয়ে এত টানাটানি করার। তবু তুমি যে হাল ছাড়বে না, তা জানি। তোমার কাছে বারবার পরাজিত হতেও ভালো লাগে। কখনো যদি ভাগ্যে লেখা থাকে, নাহয় গেলাম।

গতবার যে হলুদ রঙের ধুতি আর পাঞ্জাবিটা কিনে দিয়েছিলে, সেটি এখনো আলমারিতে তোলা আছে। বের করে পরিনি। তোমার হলুদ শাড়িটাও নিশ্চয়ই পরে আছে। তুমিও যে সেটা পরবে না, তা জানি। তুমি বলেছিলে এক বসন্তে আমরা একসঙ্গে পরব। গত বসন্ত চলে গেল, আসছে বসন্তে কি আমাদের সে সুযোগ হবে? হবে হয়তো, অপেক্ষায় রইলাম।

ত্রিণা, আমায় নিয়ে এত চিন্তা করো না। আমি ভালো আছি, ভালো থাকব। এদেশে মা আছে, বাবা আছে, ভাই-বোন, ভাগনে-ভাগনি, বন্ধুরা সবাই আছে— তাঁরা আমায় দেখবে। আমায় নিয়ে তুমি যে এত চিন্তা করো, তা দেখে মাঝেমধ্যে বড্ড ক্লান্ত হয়ে যাই। এত মানুষ, এত ব্যস্ততার মধ্যেও যে তুমি আমায় প্রতি মুহূর্তে মনে রাখার চেষ্টা করো, সত্যিই অবাক লাগে। তুমি পারোও বটে।

জানি, আমার এই চিঠিটা তুমি যত্ন করে রাখবে। কখনো হারিয়ে গেলেও এই চিঠি হারাবে না। তুমি নিশ্চয়ই বকবে, এমন অলক্ষুণে কথা বলতে নেই। আমিও কি ইচ্ছা করে বলি বলো, কী হবে! তা তুমিও জানো, আমিও জানি। তাই বলছি আমায় নিয়ে আর টানাটানি করো না। নিজের মতো ভালো থাকো। আমি আমার মতো দিব্যি ভালো আছি।

যাহোক, তোমার রাগমাখা মুখটা ভালো লাগলেও, আমি চাই না তুমি রেগে যাও। তোমার পড়ার কিংবা কাজের সমস্যা হোক, সেটাও চাই না। এবারের কোর্সের সমাপ্তিটা তোমার সুন্দর হবে দেখো নিয়ো। হয়তো আমিও সেদিন উপস্থিত থাকতে পারি, যেদিন তুমি সার্টিফিকেট নেবে।

আর কী লিখব তোমায়, খুঁজে পাচ্ছি না। মনে পড়েছে, পড়ার টেবিলে মানিপ্ল্যান্ট গাছ কয়েকটা রেখেছি তোমার অনুরোধে। তুমিও নিশ্চয়ই গাছের সংখ্যা বাড়িয়েছ! তোমার মতো যত্ন করতে পারব না। তোমার খুশিতে গাছগুলো টেবিলে রাখি। মানিপ্ল্যান্টে অর্থ না আসুক, গাছগুলো দেখলে তোমায় মনে পড়ে, আমার কাছে এটাই অনেক।

আজ আর নয়, রাখছি বরং, আবার লিখব পরে। হাসপাতালে যেতে হবে এক্স-রে করানোর জন্য। না হলে কল দিয়ে তুমিই বকাবকি করবে। তোমার যন্ত্রণায় একটু খারাপও থাকতে পারি না। কী যে মুশকিলে তুমি রাখো আমায়, কে বুঝবে। আর চিঠির অনুরোধ করতে হবে না, আমিই সময় বের করে চিঠি লিখে পাঠাব। ভালো থেকো, সুস্থ থেকো। তুমি ভালো থাকলে, আমি এমনিতেই ভালো থাকব।

ইতি,
তোমার হৃদয়

হাজীপুর, নরসিংদী