ইরান সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা দেবে ‘ইরানের পথে-প্রান্তরে’

ড. মুমিত আল রশিদের ‘ইরানের পথে-প্রান্তরে’
৩৪টি পরিচ্ছদসংবলিত বইটি শুধু একটি ভ্রমণকাহিনি, দিনলিপি কিংবা প্রবন্ধগ্রন্থ নয়। এসব কিছুর অসাধারণ সমন্বয়।

ইসলাম আর আধুনিকতার চমৎকার মিশেলে গড়া প্রাচীনকালের পারস্য বা বর্তমানের ইরান। আকাশি কালারের ওপর ইরানের ঐতিহাসিক স্থাপত্য এবং প্রসিদ্ধ কয়েকটি স্থানের ছবি সংযোজিত প্রচ্ছদসংবলিত একটি বই; যার পাতায় পাতায় জানা যায় ইরানিদের কী দারুণ নৈতিকতা, শিষ্টাচারবোধ। নাকে গন্ধ আসে ইস্ফাহানের বিরিয়ানি, কুফতে তাবরিযি, হরেক রকম কাবাব এবং রুটির। চোখের সামনে ভেসে ওঠে শাবে ইয়ালদা, চাহার শাম্বে সুরি উৎসব, নওরোজসহ ইরানের বিভিন্ন পারিবারিক এবং সামাজিক আনন্দ আয়োজন। আবার মুহূর্তেই নিজেকে আবিষ্কার করা যায় লবণাক্ত উরুমিয়ে হ্রদের ধারে, আলামুত পর্বতের চূড়ায়, সোলায়মান রাজার সিংহাসনে কিংবা মধু আর কনকনে শীতের শহরে। বলছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুমিত আল রশিদ রচিত ‘ইরানের পথে-প্রান্তরে’ বইটির কথা।

৩৪টি পরিচ্ছদসংবলিত বইটি শুধু একটি ভ্রমণকাহিনি, দিনলিপি কিংবা প্রবন্ধগ্রন্থ নয়। এসব কিছুর অসাধারণ সমন্বয়। বইটির প্রথম পরিচ্ছদ ‘ইরানের পথে প্রান্তরে’। যেখানে সংক্ষিপ্ত আকারে খুব চমৎকারভাবে লেখক তুলে এনেছেন পুরো ইরানকে। দেশটির আয়তন, সীমানা, আবহাওয়া, শিক্ষাব্যবস্থা, উৎসব, খেলাধুলাসহ সার্বিক দিকগুলো সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা নিয়েই পাঠ শুরু। তারপর একে একে শাসন আমল, সাংবিধানিক ব্যবস্থা, প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যায়। ইরানি শিষ্টাচার সম্পর্কে জেনে কার হৃদয় না পুলকিত হয়!

তথ্যবহুল এ বইটি খুব অল্প সময়েই পরিচয় করিয়ে দেয় পারস্য সভ্যতা তথা ইরানের সঙ্গে। শুধু এতেই সীমাবদ্ধ নয়, বইটির পাতায় পাতায় লেখকের সূক্ষ্ম রসবোধের পরিচয়ও পাওয়া যায়। যেমন হাস্যরসাত্মকভাবেই প্রচলিত একটি কৌতুক বর্ণনা করেছেন এভাবে,

‘এক ইসফাহানি একটি ভেড়া নিয়ে কসাইয়ের দোকানে গিয়ে কসাইকে বলল, এটি আমার জন্য জবাই করবে। আমি চাই এটাকে টুকরো টুকরো করবে, যেন কাবাব বানাতে পারি ও ঝোল করে ডিজি বানিয়ে খেতে পারি। কিছু মাংস কিমা করে দেবে, যেন কোপ্তা বানাতে পারি। মাথাটাকেও সুন্দর করে বানিয়ে দিয়ো, বাচ্চারা ওটা খেতে খুব পছন্দ করে। নাড়ি-ভুঁড়ি আর পাকস্থলী ফেলে দিয়ো না, ওটা সপ্তাহখানেক পরে মজা করে খাওয়া যাবে। চামড়াটা আবার নিজে রেখে দিয়ো না ভাই। ওটা দিয়ে জায়নামাজ বানাব। মলমূত্রগুলো ফেলে দিয়ো না, ওগুলো বাগানে সার হিসেবে কাজে লাগবে। হাড়গুলো ফেলে দিয়ো না, গিন্নি বলেছে স্যুপ তৈরি করবে। এবার ভেড়াটি ইসফাহানির দিকে তির্যক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, আমার কণ্ঠটিও রেকর্ডিং করে রাখো! ওটা তোমার মোবাইলের রিংটোন হিসেবে কাজে লাগবে!’

পৃথিবীতে প্রাচীন জাতিসভ্যতার অধিকারী বেশ কয়েকটি সভ্যতা এখনো বিরাজমান। এর মধ্যে পারস্য সভ্যতা অন্যতম। লেখক মুমিত আল রশিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ থেকে পড়াশোনা করে পেশাগত জীবনে একই বিভাগে শিক্ষকতাকে বেছে নিয়েছেন। উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য ইরানে অবস্থানকালে তেহরানের বাজার, অলিগলি, সুপারমার্কেট, ছোট্ট দোকানদার, রাস্তার ফেরিওয়ালা থেকে শুরু করে ড্রাইভার, ছাত্রাবাস ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দারোয়ান সবাইকেই যেমন শিক্ষক বানিয়ে নিয়েছিলেন, তেমনই সুযোগ পেলেই ছুটে গিয়েছেন অলিতে-গলিতে, বিখ্যাত সব স্থান এবং বিভিন্ন সামাজিক–সাংস্কৃতিক উৎসব আয়োজনে। লেখকের সে সময়কার অভিজ্ঞতার সংকলন হলো ‘ইরানের পথে প্রান্তরে’। বইটি কৌতূহলী পাঠককে ইরান সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা দিতে দারুণ ভূমিকা রাখবে।

বই সমাচার
বই: ইরানের পথে প্রান্তরে
লেখক: ড. মুমিত আল রশিদ  
প্রকাশনী: কাকলী প্রকাশনী
প্রকাশক: এ কে নাছির আহমেদ সেলিম  
প্রচ্ছদ: নিয়াজ চৌধুরী তুলি
প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০১৬
দ্বিতীয় মুদ্রণ: মার্চ ২০২১
মূল্য: ৩০০.০০ টাকা মাত্র
উৎসর্গ: প্রিয় মানুষ মা জাহানারা বেগম ও সহধর্মিণী ফেইরোয আহমাদ আসাদ

বন্ধু, কুড়িগ্রাম বন্ধুসভা