লাউ কিংবা শিমের মাচায় বা বাড়ির আঙিনায়-উঠানে যে পাখিকে নেচেখেলে চলতে দেখা যেত, আনাচে–কানাচে শিস বাজিয়ে মানুষের দ্বারপ্রান্তে থেকে মিষ্টি সুরে ডাক দিত, সেই পাখিকে আজ আর তেমন একটা দেখা যায় না। কেবল বাংলাদেশ সরকারের দুই টাকার নোটেই যেন তার দেখা মেলে। সবুজ প্রকৃতিজুড়ে থেকে মানুষকে বিমোহিত করা পাখিটা আজ কোথায়? কোথায় হারিয়ে গেল!
একটা সময় ছিল যখন দোয়েল পাখির আনাগোনায় প্রকৃতি সৌন্দর্যময় ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠত। সবুজ প্রকৃতিজুড়ে ছিল যার অবাধ বিচরণ। সকালবেলা সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে মিষ্টি সুরে ডাক পেড়ে মানুষের ঘুম ভাঙাত এই পাখি। তার মিষ্টি সুরে যে কেউ বিমোহিত হয়ে যায়, যেন মানুষের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক।
কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, সাদা-কালো এ পাখি এখন আর তেমন দেখা যায় না। টিয়া, ঘুঘু, কাক, মাছরাঙা ইত্যাদি পাখি বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেলেও জাতীয় পাখি দোয়েল চোখেই পড়ে না। মুরব্বিরা বলতেন, মুয়াজ্জিনের আজানের সুরে এরা সুর মেলাত। আর গাছের ডালে বসে নামাজ পড়ত। একটা সময় পরিচিত এ পাখির চিঁ চিঁ শব্দ শুনতে পাওয়া গেলেও তার সুর এখন আর শোনা যায় না বললেই চলে। অথচ আগে বাঁশগাছ, নারকেল আর শজনেগাছে অথবা বাড়ির ছাদে পাখিটিকে সব সময় দেখতে পাওয়া যেত।
নদীর ভাঙনের ফলে ফসলি জমিতে উঠছে ঘরবাড়ি, জনসংখ্যার প্রভাবে কোথাও না কোথাও প্রতিদিন নতুন নতুন ঘরবাড়ি তৈরি হচ্ছে। আর এসব করতে গিয়ে গাছ কেটে বন উজাড় করে পাখিদের আবাসস্থল ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। খাদ্যসংকট এবং যথাযথ বাসযোগ্য স্থানের অভাবে দোয়েল আজ বিলুপ্তপ্রায়।
অতিরিক্ত মুনাফার আশায় বনে চোরা শিকারিরা বিভিন্ন ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করে বাজারে বিক্রি করছেন। এতে শিকারের হাত থেকে জীবন রক্ষার্থে পাখিরা অন্যত্র চলে যাচ্ছে। অনেক সময় তাঁদের হাতে মারাও যাচ্ছে পাখি।
দোয়েল আমাদের জাতীয় পাখি। এটি সংরক্ষণে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি আমাদের আরও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করা দরকার। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সরকারেরও উচিত কঠোর আইন প্রণয়ন করে পাখি শিকারের ওপর বিধিনিষেধ আরও জোরদার করা।
শিক্ষার্থী, বাকলিয়া সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম