যে দিনটি কেবল ইন্ট্রোভার্টদের জন্য

আপনিও কি ইন্ট্রোভার্ট? মডেল: মিতুছবি: লেখকের সৌজন্যে
ইন্ট্রোভার্টদের খাটো করে দেখা কিংবা আলাদা মনে করার কোনো উপায় নেই। সৃজনশীল ও শৈল্পিক কাজে তাঁদের অবদানই বেশ লম্বা পরিসরে বিস্তৃত।

কিছু মানুষ থাকেন, যাঁরা সহজে অন্যদের সঙ্গে মিশতে পারেন না। নিজেকে উপস্থাপন করতে গিয়ে গোলমাল পাকিয়ে ফেলেন। আয়োজন–কোলাহল থেকে নিজেকে একটু দূরেই রাখেন। কেন কথা বলেন না, মানুষের সঙ্গে কেন মিশতে পারেন না; এমন নানা প্রশ্ন বারবার ছুটে আসে। ছোটবেলা থেকেই অনেকে আবার সমাজের মানুষের কাছ থেকে ‘অসামাজিক’ তকমা পেয়ে বসেন। মনের মধ্যে এর একটা বিরূপ প্রভাব থেকে যায় সব সময়।

যাঁরা একা থাকতে পছন্দ করেন, একা ঘুরে বেড়ান, মানুষের কাছে গিয়ে কথা হারিয়ে ফেলেন, মনের ভেতর দুনিয়ার গল্প থাকলেও বলতে গিয়ে গল্প খুঁজে পান না, নিজেকে ঠিকভাবে মানুষের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারেন না, একা রাখতে পছন্দ করেন, তাঁদেরকে আমরা ইন্ট্রোভার্ট বা অন্তর্মুখী স্বভাবের বলি। এমন স্বভাবের মানে এই নয় যে তাঁরা মানুষের সঙ্গে একেবারেই মিশতে পারেন না। সমস্যা হচ্ছে, তাঁদের কমফোর্ট জোন খুঁজে পাওয়া। নিজেদের স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গায়, পরিচিত মানুষের সঙ্গে তাঁরাও প্রাণবন্ত হয়ে উঠতে পারেন।

আপনি জেনে অবাক হবেন যে এমন মানুষের জন্যও বিশেষ দিবস পালন করা হয়। জার্মান মনোবিজ্ঞানী ফেলিসিটাস হেইন ২ জানুয়ারিকে জাতীয় ইন্ট্রোভার্ট দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব করেন। নতুন বছর বিদায় ও বরণ করার উৎসবের পর ইন্ট্রোভার্টদের জন্য এ দিনটি বেছে নেন তিনি। হইহুল্লোড় পেরিয়ে ওই দিন তাঁরা ডুব দেবেন নিজেদের জগতে, যেখানে তিনি ছাড়া আর কেউ থাকবেন না। সেটা হতে পারে নীরবে বই পড়ে, গান শুনে, একা কোথাও ঘুরতে গিয়ে, একা একা সিনেমা দেখে কিংবা নিজের মনের রাজ্যে ভাবনার জগতে হারিয়ে গিয়ে। অনেকটা রবীন্দ্রনাথের ‘কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা’ গানের মতো।

ইন্ট্রোভার্টদের খাটো করে দেখা কিংবা আলাদা মনে করার কোনো উপায় নেই। সৃজনশীল ও শৈল্পিক কাজে তাঁদের অবদানই বেশ লম্বা পরিসরে বিস্তৃত। আলবার্ট আইনস্টাইন, বিল গেটস, মার্ক জাকারবার্গ, মহাত্মা গান্ধীসহ আরও অনেকে এই দলের সদস্য, এমনকি জনপ্রিয় চরিত্র হ্যারি পটারের লেখিকা জে কে রাওলিং যখন প্রথমবার স্টেশনে বসে হ্যারির চরিত্রটা কল্পনা করেছিলেন, তিনি নিজের অন্তর্মুখী স্বভাবের জন্য কারও কাছ থেকে একটা কলম চেয়ে নেবেন, সেটা পর্যন্ত নিতে পারেননি। তাঁর অন্তর্মুখিতার জন্যই তিনি কল্পনার রাজ্যে সুন্দরভাবে সাজিয়ে তুলতে পেরেছিলেন জাদুর বিস্ময় দুনিয়া।

বিরূপ মন্তব্য না করে ইন্ট্রোভার্টদের সময় দিলে তাঁরাও ভালো বন্ধু হয়ে উঠতে পারেন। যাঁরা কাছ থেকে তাঁদের দেখেছেন, তাঁরাই এটা সবচেয়ে ভালো আবিষ্কার করতে পারবেন। তাঁরাও অন্তর্মুখিতার খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারেন অনেকটা। মানিয়ে নিতে পারেন সবকিছু। বড় ব্যাপার হচ্ছে, তাঁদের এড়িয়ে যাওয়া মানে না পারা নয়, নিজের কাছে নিজের একটা সীমাবদ্ধতা মাত্র।

নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ