সৌমেন্দ্র গোস্বামীর একগুচ্ছ কবিতা
আমার জন্য কখনো কেউ মন খারাপ করেনি
আমার জন্য কখনো কেউ মন খারাপ করেনি
পুকুরে হারানো সোনার মতো
হারিয়ে থাকতে থাকতে
রাতের মজলিস
দুপুরের কড়া নাড়া
শহরের ঠিকাদারি
ফুরিয়ে গেছে
তব্দা খাওয়া বিস্ময়ে ইদানীং মালাকে খুব মনে
পড়ে; ব্যথার পালকি কাঁধে হাঁটতে হাঁটতে
ছনের বন পেরিয়ে
আকাশের বুকে ডুবসাঁতার দিয়ে
ঘরে ফিরি
রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বঙ্কিমের সাথে
শঙ্খ ঘোষও আছেন দেখে ভালো লাগে
তাঁদের পাশে গিয়ে বসি
আরও ভালো লাগে
বারান্দার রকে মধুসূদনকে দেখে
মালাকে আশীর্বাদ দিই;
তবুও গোপন কিন্তুর মতো ক্ষণে ক্ষণে
মিটিং মোডে বাজতে থাকে,
আমার জন্য কখনো কেউ মন খারাপ করেনি।
পরাজয়
তেইশটি বসন্ত পেরোনোর পরও জীবন কালো কৌতুক
সব পরিকল্পনা ব্যর্থ;
অবশ্যম্ভাবী তুমি-আমি নির্লিপ্ত, নিঃসহায়
গ্যাসের চুলায় লাল আগুনে অঙ্গার দুধসরের ন্যায়
ক্রমাগত ভাবনার আঁকিবুঁকি খেলায়
আহত বদনামে তবুও সেই তোমাকেই এঁকে যাই
ত্রয়ীর দিব্যি, শরতের বিরহ ভেঙে জাদুমন্ত্রের মায়ার
মতো এসো;
ঝরনার কল্লোলে ভাসিয়ে নাও স্মৃতির বৈতরণী...
কবি
হৃদয় বিজয়রথে অভুক্ত দাঁড়কাক
বহুদিন স্থির দাঁড়িয়ে; কখনো জলের পরে শুয়ে
আকাশের চাঁদ দিয়ে ডাঙ্গুলি খেলে
আলপনা রঙে
সুশ্রী হয়ে ওঠে বিষাক্ত হেমলক
পৃথিবীর মানুষ যেভাবে তাকায়, যেভাবে যাপন করে মোহগ্রস্ত সুখ
প্রকারান্তরে ভিন্ন চোখে, ভিন্ন সুখে
অভিন্ন মায়ায় একটা জীবন যাদের কেটে যায়
বরফ ভাঙার মতো রক্ত ঝরে
বেদনায়, ভালোবাসায়, কামনায়, মোহনীয় বসে
ধীর চোখে চেয়ে দেখে বাণীর প্রভাত;
আমি তাদের একজন, আর কোনো পরিচয় নেই আমার
আমি কবি, আমার বুকে সকাল-সন্ধ্যা মেহেরুন রঙের ফুল ফোটে।
অভিযাত্রী হও
জীবন এক ব্রেকলেস গাড়ি; কখনো থামে না সে
যখন ঘুমের ভেতর মরে থাকো
তখনো এগোই
লাল সাইকেল, হলুদ রটরেনডাম
অতীত হওয়ার পর ফিরে আসে ছাতার ছাদ
মাছরাঙা মনে প্রেমিক নও, অভিযাত্রী হও;
পুরোনো আধুলির মতো অভিযাত্রীর যদিও কিছু থাকে
অশেষ অবশেষে—
আফসোস ব্যতীত প্রেমিকের কিছুই থাকে না।
আমি
চামচে খেতে পারি না, জোরাজুরি ছাড়া পাঞ্জাবি পরি না
হাতঘড়ি পরি আট শ টাকার
ব্র্যান্ড না; খুব বেশি হলে চার শ টাকা
এর বেশি মানিব্যাগে কখনো থাকে না
বাইরে খাই না বলে, রেস্টুরেন্টে খাওয়ার আবদার
এড়িয়ে যাই; চোখের চশমাটা তিন শ টাকার
আলেয়া ঘেরা দোকানগুলোর দিকে চেয়ে থাকি
জামা, টি-শার্ট, জিনসের জন্য
ডিসকাউন্টের ট্যাগ ঝুলতেই কিনব;
তবুও উদভ্রান্ত নই। বাড়ি-গাড়ির স্বপ্ন দেখি না
জীবন একপ্রকার চলেই যাবে বোধ হওয়ার পর
আর কোনো দুঃখ নেই; মাস–মাইনের একটি চাকরি
ব্যতীত কোনো স্বপ্ন নেই
ভালোবাসার দামে জীবনকে বিক্রি করতে গিয়েও
অবিক্রীত থাকার পর;
আর কোনো সীমাবদ্ধতা নেই
আমি ভালো আছি, আমার আর কাউকে প্রয়োজন নেই।