আমার মাতৃগর্ভ, আমার দেশ

দেশ মানে শুধু একটুকরো ভূখণ্ডের সীমানা নয়
দেশ বলতে তুমি যদি একটুকরো সীমানা বোঝো
তবে বলতে হয়, তুমি দেশ কথাটার মানেই বোঝো না
হ্যাঁ, তোমার মানচিত্র তোমার
আমার মানচিত্র আমার
মানচিত্রের ভাগ কাউকে চাইলে দিতে পারো
ইচ্ছে না করলে দিয়ো না
দেশ মানে রাজনীতি আর জাতীয়তাবাদের স্বার্থে তোমরা শুধু একটুকরো মানচিত্র বোঝো
দেশ মানে কিন্তু শুধু একটুকরো মানচিত্র না
জীবন-জীবিকা মারণক্ষুধা বেঁচে থাকার তাড়নায়
সমস্যায় জর্জরিত মানুষ পরিবেশ-পরিস্থিতির চাপে
এক মানচিত্র ছেড়ে অন্য মানচিত্রে চলে যায়
যে পাত্রের জাতীয়তাবাদের জল আর হাওয়া যেমন
দীর্ঘদিন ধরে বাস করতে করতে মনে মননে সে আকার নেয়
অস্তিত্বের সংকটে বারবার হারানো দেশের কথা মনে পড়ে যায়
বুক চিরে চোখে জল চলে আসে
পৃথিবীজুড়ে জল আর হাওয়ার কি কোনো জাতীয়তাবাদ আছে?

ক্ষুধার জন্য লাগে খাবার
তৃষ্ণার জন্য জল
বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন
অন্ন, জল আর অক্সিজেনের কোনো জাতীয়তাবাদ হয় না
ওই বিশাল আকাশজুড়ে কারও মানচিত্র আঁকা নেই
একই সূর্যের একাধিপত্যে গোটা পৃথিবী আলোকিত
তুমি সূর্যকে দেবতা মানো সেটা তোমার বিশ্বাস
আমি সূর্যকে মানি বিজ্ঞান
কিন্তু আমাদের প্রত্যেকের বুকের ভেতর জন্মভূমির একটা সূর্য আছে
জন্মচোখে সেই সূর্য আলো দিয়েছে
মায়ের মুখের ভাষা মাতৃদুগ্ধের মতো আমাকে বাঁচিয়ে তুলেছে
দশ মাস দশ দিন মাতৃগর্ভের এ সময়ই আমার দেশ, আমার মাতৃভূমি, আমার জন্মভূমি
মানচিত্র বলতেও তাই আমি মাতৃগর্ভকেই বুঝি
দেশ ভেঙে দেশ গড়ে ওঠে
এক দেশের মানুষ অন্য দেশে চলে যায়
ওই দেশে তাড়া খাওয়া মানুষ এই দেশে চলে আসে
রংবাহারি জাতীয়তাবাদ নেতা–মন্ত্রীদের উদর ভরায়
সন্তানের শরীরে মায়ের রক্তকে কেউ কখনো আলাদা করতে পারে না
মাতৃগর্ভকে কেউ কখনো ভাগ করতে পারে না
আমার মাতৃগর্ভই আমার দেশ
মায়ের চোখের জল আর আমার কান্না দিয়ে আমার দেশের জন্ম হয়েছে