আব্বা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে উৎসাহ দিতেন

অলংকরণ: এস এম রাকিবুর রহমান

ডিসেম্বর মাস এলে ছোটবেলায় বিজয়ের আনন্দই বেশি হতো। আর এখন বিজয়ের সঙ্গে বেদনামিশ্রিত আনন্দের অনুভূতি হয়। তবে নিজেকে সব সময় গর্বিত মনে করি।

আমার আব্বা আজিজুল বারী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। লেখাপড়া করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে। কর্মজীবনে প্রথমে প্রধান শিক্ষক, পরবর্তী সময়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। গ্রামের বাড়ি ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার রেজুমিয়া দক্ষিণ সদর। সেখান থেকে হেঁটে ফেনী সরকারি কলেজে পড়তে আসার গল্প বলতেন আমাকে। মুক্তিযুদ্ধের কথা বলতে গেলে অনেক আবেগতাড়িত হয়ে যেতেন। মাঝেমধ্যে কষ্টও পেতেন; বিশেষ করে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা দেখে। নব্বইয়ের দশকের রাজনৈতিক হানাহানি ও সংঘাত দেখে প্রায়ই বলতেন, দেশ স্বাধীন করেছি, তবে এগুলো দেখার জন্য যুদ্ধ করিনি।

আব্বা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে। ছাগলনাইয়ার পাঠাননগরে মুক্ত এলাকায় নিজেদের ক্যাম্প পাহারায় ছিলেন শহীদ সিপাহি রবিউল হকসহ সহযোদ্ধারা। সেখানেই তিনি ছিলেন। একদিন হঠাৎ ক্যাম্পের আশপাশে গোলা পড়তে লাগল। মুক্তিযোদ্ধারা বুঝতে চেষ্টা করলেন, আক্রমণ আসছে কোনো দিক থেকে। দ্রুত নিরাপদ অবস্থান নিতে থাকলেন। কিন্তু বিস্ফোরিত গোলার স্প্লিন্টার মুক্তিযোদ্ধা রবিউল হকের শরীরে আঘাত করলে এই বীর সন্তান শহীদ হন। আব্বাসহ সহযোদ্ধারা তাঁর মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়ে পালিয়ে যায়। একটি অংশ যায় চট্টগ্রামের দিকে, আরেকটি অংশ পালায় কুমিল্লার লাকসামের দিকে। পাকিস্তানিদের ফেলে যাওয়া অস্ত্র–গোলাবারুদ আব্বাসহ মুক্তিযোদ্ধারা সংগ্রহ করে পাঠাননগর ক্যাম্পে রাখেন। এরপর তাঁরা বিলোনিয়া, শুভপুর ও ছাগলনাইয়ায় পাকিস্তানিদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধ করে জয়ী হন।

১৯৯৮ সালে আব্বা না–ফেরার দেশে পাড়ি জমান। উনি আমাদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে উৎসাহ দিতেন। বলতেন, একটি সুন্দর দেশের স্বপ্ন দেখি, যেখানে থাকবে না কোনো অন্যায়-অবিচার, আমিও আব্বার স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যেতে চাই।

পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক, ফেনী বন্ধুসভা