সময়টা ২০১৬ সাল, কেবল প্রাইমারি পাস করেছি। ষষ্ঠ শ্রেণিতে নতুন যেখানে ভর্তি হই, সেখানে বেশি দিন মন বসেনি। ছোটবেলায় একবার অসুস্থ হলে আম্মা মানত করেছিলেন, আমাকে কোরআনের হাফেজ বানাবে। এ কারণে নতুন ক্লাসে বেশি দিন পড়া হয়নি। এক সপ্তাহের মতো ক্লাস করেছিলাম। এরপর আম্মা ভর্তি করিয়ে দেন একটি মাদ্রাসার হেফজ বিভাগে।
নতুন পথ, নতুন জায়গা। মানিয়ে নিতে কষ্ট হলেও এর সুফল পেয়েছি খুব আনন্দের সঙ্গে। হেফজ বিভাগে ভর্তি হয়েছিলাম গ্রাম থেকে অনেক দূরে, শহরের এক মাদ্রাসায়। মাদ্রাসার রুটিন, নিয়ম-কানুন অনেক কঠিন ছিল। আম্মাকে ছাড়া চার দেয়ালের ভেতরে অন্ধকার অন্ধকার লাগত। আম্মাকে মিস করতাম আর ভাবতাম—স্কুলে থাকাকালীন আম্মার সঙ্গে কত সুন্দর সময় ছিল।
আম্মাকে ছাড়া আমার পৃথিবী যেন ছন্নছাড়া। মাদ্রাসায় থাকাকালে দুই মাস পর একবার করে তিন দিনের জন্য ছুটি পেতাম, আর গ্রামের বাড়িতে চলে আসতাম। সময়গুলো যেন কত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যেত। আবার চলে যেতাম মাদ্রাসায়। চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী হয়ে যাওয়া। মাকে মিস করলে কখনো কখনো চোখ দিয়ে অশ্রু ঝড়ে পড়ত। রাতে ঘুম আসত না। পড়ায় মনোযোগী হতে পারতাম না। সারাক্ষণ মায়ের কথা ভাবতাম। তখন থেকেই বুঝতে শিখেছি, পৃথিবীর সব ভালোবাসা মিথ্যা, কেবল মায়ের ভালোবাসা ছাড়া।
আমার আম্মা একজন গৃহিণী। গৃহিণী হলেও তিনি আমার প্রথম শিক্ষক। জন্মের পর হাঁটাহাঁটি থেকে দৌড়ানোর পথ পর্যন্ত শিখিয়েছেন ভাষা, শিখিয়েছেন আদব–কায়দা ও নম্রতা-ভদ্রতা। বড় হয়ে কথা বলতে শিখেছি। মঞ্চে বক্তব্য দিতে শিখেছি।
আম্মার কোল আমার কাছে পৃথিবীতে সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়। যদি কখনো রাতে ভয় পাই, এখনো আম্মার কোলে ঘুমাই। মনে হয় না, আমার বয়স বেড়েছে। ছোট্ট শিশুর মতো নীরবে-নিভৃতে ঘুমিয়ে পড়ি। আবার যদি কখনো হতাশায় ভেঙে পড়ি, আম্মা আমাকে সাহস জোগান। নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে উৎসাহ দেন। তিনি আমাকে বোঝান, যেভাবে বোঝান ছোট্র শিশুকে তাঁর মা।
কুতুবদিয়া, কক্সবাজার